এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেরালা,০৬ নভেম্বর : ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এ কাশ্মীরি পন্ডিতদের গনহত্যার চিত্র বর্নিত হয়েছিল । সেই সমস্ত নৃশংস, বর্বরোচিত ঘটনা রূপালি পর্দায় দেখার পর যে কোনো সংবেদনশীল মানুষই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি । এবার কেরালার লাভ জিহাদের ফাঁদে পরা অমুসলিম মেয়েদের শেষ পরিনতি নিয়ে নিয়ে নতুন একটি ছবি নির্মিত হয়েছে, যার নাম ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ । গত ৩ নভেম্বর ছবিটির ট্রেলার প্রকাশিত হয়েছে । লাভ জিহাদের ফাঁদে পরে ৩২,০০০ অমুসলিম মহিলা কিভাবে আইএসআইএস (ইসলামিক স্টেটস অফ ইরাক ও সিরিয়া)-এর সন্ত্রাসবাদী হতে বাধ্য হয়েছিল তা বর্ননা করা হয়েছে ছবিটিতে । সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত ‘দ্য কেরালা স্টোরি’তে ওই সমস্ত মহিলাদের মর্মস্পর্শী পরিনতির কাহিনী তুলে ধরেছেন পরিচালক সুদীপ্ত সেন এবং প্রযোজক বিপুল অমৃতলাল শাহ ।
বলা হচ্ছে,গল্পটিকে বড় পর্দায় উপস্থাপন করার আগে পরিচালক সুদীপ্ত সেন বেশ কিছু আরব দেশ সহ গোটা কেরালা পরিদর্শন করেছিলেন, স্থানীয় বাসিন্দা এবং নিহত মহিলাদের আত্মীয়দের সাথে কথা বলেছেন । আর তিনি যা দেখেছিলেন তা শিউরে ওঠার মত । চলতি বছরের মার্চে প্রযোজক বিপুল শাহ বলেছিলেন,’এই সিনেমায় আপনি একটি মানবিক ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হবেন যা আপনাকে বিচলিত করতে পারে । সুদীপ্তর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময় কাহিনী শুনে আমি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম । উনি তিন থেকে চার বছরব্যাপী বিস্তৃত গবেষণা করেছিলেন। যেদিন উনি কাহিনী শুনিয়েছিলেন সেদিনই আমি এই ছবিটি প্রযোজনা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম । আমরা এমন একটি চলচ্চিত্র তৈরি করছি যার চিত্রিত ঘটনাগুলির অত্যন্ত বাস্তবসম্মত, নিরপেক্ষ এবং নির্ভুল ।’
ছবিটির ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক সীমান্তের সামনে একজন মুসলিম নারী তার জীবনের করুন কাহিনী বর্ণনা করছেন । বোরখা পরিহিতা অভিনেত্রী আদা শর্মা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন,’আমার নাম ছিল শালিনী উন্নীকৃষ্ণান । একজন নার্স হিসাবে আমি মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলাম । এখন আমি ফাতিমা,আইএসআইএস সন্ত্রাসবাদী । ঠিকানা আফগানিস্তানের জেল । তবে আমি একলা নই । আমার মত ৩২ হাজার মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে সিরিয়া ও ইয়েমেনের মরুভূমিতে কবরস্থ রয়েছে । একটি সাধারণ মেয়েকে সন্ত্রাসবাদীতে পরিনত করার ভয়ঙ্কর খেলা চলছে কেরালায়,আর সেটা চলছে প্রকাশ্যে । কেউ কি একে আটকাবে না ? এটা আমার কাহিনী । এটা ওই ৩২ হাজার মেয়ের কাহিনী।’
সাম্প্রতিক তদন্ত অনুসারে, ২০০৯ সাল থেকে কেরালা এবং ম্যাঙ্গালোরে হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের আনুমানিক ৩২,০০০ মহিলা ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে৷ এই মেয়েদের বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য অঞ্চলে আইএসআইএস এবং হাক্কানিদের মত সন্ত্রাসবাদী সংঘঠনগুলির মধ্যে কেটেছে ৷ আর দক্ষিণের ওই রাজ্যগুলিতে অমুসলিম মেয়েদের ধর্মান্তরিত করে সন্ত্রাসবাদের রাস্তায় ঠেলে দেওয়ার পিছনে দায়ি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং এর অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলি । জাতিসংঘ তার ২০২০ সালের সন্ত্রাসবাদ প্রতিবেদনে সতর্ক করে জানিয়েছিল যে ভারতের কেরালা রাজ্যে যথেষ্ট সংখ্যক আইএসআইএস সন্ত্রাসবাদী রয়েছে।
তবে ধর্মান্তরিত করার ঘটনাগুলি শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে । কিন্তু কেরালায় আইএসআইএস এর অস্তিত্ব ধরা পড়েছিল ২০১৩ সালে । ২০১৪ সালের সালের প্রথম দিকে কেরালায় শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি । সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কেরালার প্রচুর পুরুষ ও মহিলা আইএসকেপি (ইসলামিক স্টেট অফ খোরাসান প্রদেশ)তে যোগদান করেছে বলে জানা গেছে । বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু অমুসলিম মহিলাকে তারা ধর্মান্তরিত করে ইসলামিক স্টেটের হয়ে লড়াই করার জন্য আফগানিস্তান ও সিরিয়ায় পাঠায় ।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী,২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে কেরালায় ৫,৯৭৫ জন ব্যক্তি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন বলে জানা গেছে । শুধু ২০১৫ সালে ধর্মান্তরিত হওয়ার সংখ্যা ১,৪১০ জন । নতুন ধর্মান্তরিতদের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী মহিলারা ৭৬ শতাংশ । মারকাজুল হিদায়া এডুকেশনাল অ্যান্ড চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মত র্যাডিক্যালাইজেশন, কনভার্সন এবং রিক্রুটিং সেন্টারগুলি সুকৌশলে কেরালায় ইসলাম কট্টরপন্থার জাল বিস্তার করে চলেছে । সব জেনে বুঝেও শুধু ভোট ব্যাঙ্ক ঠিক রাখতে এতদিন চোখ বুজে বসেছিল কংগ্রেস ও সিপিএম-এর মত রাজনৈতিক দলগুলি । মূলত এই দুটি দলই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কেরালায় ক্ষমতায় আসে । আর এই সুযোগে ইসলাম মৌলবাদের শিকড় বহু দুর বিস্তৃত হয়ে গেছে পিনারাই বিজয়নের রাজ্যে ।।
তথ্যসূত্র : ওপি ইন্ডিয়া ।