এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,০২ নভেম্বর : দেশের মেয়েদের জন্য হিজাবসহ একাধিক বিধিনিষেধ জারি করে রেখেছে কট্টর মৌলবাদী সংগঠন তালিবান । এদিকে নিজেদের প্রবৃত্তিকে দমন করার বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই । আফগানিস্তানের একছত্র অধিপতি তালিবানরা এখন ভয় ও অর্থের লোভ দেখিয়ে ৩-৪ টে করে বিয়ে করে নিচ্ছে । নবীর সুন্নাহকে প্রতিস্থাপনের অজুহাতে সুন্দরী ও অল্পবয়সী মেয়েদেরকে মূলত তারা টার্গেট করছে ।
আফগানিস্তানের একটি সংবাদ মাধ্যম সুত্রে জানা গেছে,তালিবান ক্ষমতায় আসার অব্যবহিত পরেই আলাহে দোলাওয়ারজাই নামে একটি অল্পবয়সী মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে একজন উচ্চ পদস্থ তালিবান কর্মকর্তা । মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের উপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করা হয় । এনিয়ে তালেবানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন মুখপাত্রের কাছে অভিযোগও জানায় পরিবার । একই এলাকার বাসিন্দা ডালওয়ারজাই নামে এক বিবাহিত মহিলাকে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তালিবানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন মুখপাত্র বৃদ্ধ সাইদ খোস্তি আলাহা দ্লাওয়ারজাইয়ের বিরুদ্ধে । অভিযুক্ত ব্যক্তি সাঈদ খোস্তি হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান এবং তালিবানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে ।
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর এই গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিয়ের কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে ৷ একাধিক বিয়ের তালিকার শীর্ষে রয়েছে তালেবান মুখপাত্র ও মিডিয়া চিন্তাবিদ জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের নাম । ক্ষমতায় আসার প্রায় ছয় মাস পর বাদাখশানের কেন্দ্র ফৈজাবাদের বাসিন্দা একটি অল্প বয়সী মেয়েকে সে জোর করে বিয়ে করে । এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে ।
এই তালিকায় নাম রয়েছে পাঞ্জশির প্রদেশের প্রাক্তন নিরাপত্তা প্রধান আবদুল হামিদ খোরাসানি । কিছুদিন আগে তিনি চতুর্থ বিয়ে করেছেন ।পাঞ্জশিরের একজন তালিবান কমান্ডার একজন মহিলাকে জোরপূর্বক বিয়ে বিয়ের চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু মহিলার আত্মীয়দের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে তাকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হতে হয় ।
শুধুমাত্র দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিয়েই নয়,তালিবানের কিছু কমান্ডার তাদের বিয়েতে প্রচুর অর্থ ব্যয়ও করেছে বলে খবর । গজনির তালিবান ডেপুটি গভর্নর সৈয়দ মুহাম্মদ হানিফ ইবাদ প্রায় সাত মাস আগে এই প্রদেশের গারো জেলার বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন । মেয়েটিকে দশ লাখ আফগানি দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল । টাকার লোভে ওই তরুনী সৈয়দ মুহাম্মদ হানিফের তৃতীয় স্ত্রী হতে রাজি হয়ে যান ।
গজনির বিদ্যুৎ কোম্পানির পরিচালক নাসির আহমেদ তাওয়াকলি হলেন আর এক তালিবান কর্মকর্তা যিনি প্রচুর অর্থ দিয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন । মাস তিনেক আগে আগে তিনি ২ লাখ ৭০০ আফগানির বিনিময়ে এক তরুণীকে বিয়ে করেছেন । তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে হেরাতের বাসিন্দা মৌলভী গোলাম নবী নামে এক প্রৌঢ় সাধারণ নাগরিক হিসেবে বসবাস করতেন । তার একটি স্ত্রী এবং বেশ কয়েকটি সন্তান রয়েছে । গুজারের জেলা গভর্নর হওয়ার আগে তিনি প্রচুর অর্থ দিয়ে একটি অল্পবয়সী মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন । মেয়েটির বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে ।
তাখারের দারকাদ জেলার গভর্নর হুমায়ুন নামে পরিচিত শামসুদ্দিন দুই সপ্তাহের মধ্যে এক তালাকপ্রাপ্ত মহিলা ও একটি কিশোরীকে বিয়ে করেছেন। তার মধ্যে গুল জোহর নামে ওই মহিলা বিবাহিতা । তাঁকে তালাক দিতে বাধ্য করে শামসুদ্দিন । পঞ্চাশোর্ধ এক তালিবান কমান্ডার ২০ বছরের এক তরুনীর বাবাকে ব্যাপক মারধর করে তার মেয়েকে বিয়ে দিতে বাধ্য করে । ওই তালিবান কমান্ডার সরকারি সংস্থার প্রধান পদে নিযুক্ত রয়েছে এবং তার স্ত্রী ও বেশ কয়েকটি সন্তান রয়েছে ।
এর আগে এক তালিবান নেতা একটি ডিক্রি জারি করে বিয়ের সময় প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের সম্মতির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে লাগামছাড়া ব্যয় রোধ করার নির্দেশ দিয়েছিলে । কিন্তু তিনি নিজের তৈরি আইনই লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ । ওই তালিবান নেতা তার নতুন স্ত্রীর পরিবারকে ১২ লক্ষ আফগানী যৌতুক দিয়েছিলেন এবং নব বধুকে লোগারের বারাক জেলার শাহ মাজার গ্রাম থেকে খোস্ত প্রদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন একটি সামরিক হেলিকপ্টারে ।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক নিকোলেট ওয়াল্ডম্যান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, গত এক বছরের তালিবান শাসনে আফগানিস্তানে মহিলা ও অল্প বয়সী মেয়েদের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে । তারা নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্যের সম্মুখীন হচ্ছে। ওয়াল্ডম্যান আরও বলেছেন যে আফগানিস্তানে মহিলাদের শান্তি, স্বাধীনতা এবং তাদের পছন্দের জীবনের অধিকার নেই এবং তাদের জন্য জীবন “সত্যিই ভয়ঙ্কর”।।