প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ নভেম্বর : ছেলে গুজরাট থেকে বাড়িতে ফিরছে। তাই ছেলের জন্য সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত পথ চেয়ে বসে থাকলেন বাবা মা।রাত অড়াইটে নাগাদ ছেলে হাবিবুল শেখ পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর কেশববাটি গ্রামের বাড়িতে ফিরলো ঠিকই,তবে কফিন বন্দি হয়ে।গুজরাটের মোরবির ঝোলা সেতু বিপর্যয়ে প্রিয় সন্তান হাবিবুলের এমন মর্মান্তিক পরিণতি দেখে নিজেদের স্থির রাখতে পারেননি বাবা মহিবুল শেখ ও মা লুৎফা বিবি।ছেলের মৃতদেহ বুকে জড়িয়ে নিয়ে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন । একমাত্র সন্তাকে হারানো বাবা মায়ের বুক ফাটা কান্না দেখে পরিজন ও প্রতিবেশীরাও নিজেদের চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। ধর্মীয় আচার প্রথা মেনে এদিনই সম্পন্ন হয় হাবিবুলের শেষকৃত্য।শোকের আবহের মধ্যেই
বিজেপি শাসিত কেন্দ্র ও গুজরাট সরকারের
বিরুদ্ধে বঞ্চনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে
গর্জে উঠলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও বিধায়করা।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের মুকসিমপাড়া পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম কেশববাটি। এই গ্রামের বছর ১৬ বয়সী যুবক হাবিবুল শেখ সোনার অলংকার তৈরির কাজ প্রায় দশ মাস আগে গুজরাটে যায় ।হাবিবুলের ছোট কাকা সহিবুল শেখ গুজরাটের মোরবিতে থাকেন।সেখানে ছোট কাকার পরিবারে থেকেই হাবিবুল কাজ শিখছিল । কাকা সহিবুল শেখ এদিন বলেন,
রবিবার ছুটি দিন বিকালে বেশ কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে হাবিবুল মোরবির মাচ্ছু নদির উপরে থাকা ঝোলা সেতুতে বেড়াতে যায় ।
মাচ্ছু নদিতে চলা ছট পুজোর ধর্মীয় উপাচার
দেখতে ওইসময়ে ঝোলা সেতুতে বহু মানুষের জমায়েত হয়েছিল। তখন আচমকা সেতুটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লে হাবিবুল সহ শাতাধীক জন মাচ্ছু নদীর গভীর জলে পড়ে যায় । তাতেই মৃত্যু হয় হাবিবুলের । ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার পর থেকে শুধুই মৃত্যু-মিছিল দেখছে গোটা দেশাসী । মঙ্গলবার পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ১৩৫ জনের দেহ। আহতও হয়েছেন অনেকে ।
ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজন নিজেদের আর্থিক খরছে বিমানে করে হাবিবুলের মৃতদেহ গুজরাট থেকে বাংলায় আনেন। দমদম বিমানবন্দর থেকে শববাহী গাড়িতে মৃতদেহ চাপিয়ে নিয়ে পরিবারের লোকজন রাত আড়াইটে নাগাদ পূর্বস্থলীর বাড়িতে পৌছান ।
হাবিবুলের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে
এদিন তাঁদের বাড়িতে যান রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ,বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধায়, জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি রাসবিহারী হালদার সহ অন্য বিশিষ্ঠরা । যুবক হাবিবুলের মৃতদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, গুজরাট মডেল আসলে কি তা গোটি দেশবাসী নিজের চোখেই দেখতে পেলেন । একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নবান্ন থেকে হোম সেক্রেটারি এবং জেলাশাসকের ফোন পাবার পরেই তিনি হাবিবুল শেখের বাড়িতে হাজির হন। পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছি। স্বপন বাবু এও বলেন,মৃত হাবিবুলের মায়ের হার্টের অসুখ রয়েছে বলে জানতে পেরেছি। ওনার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে কিনা সেটি আমরা দেখছি ।’ রাজ্য সরকারও সর্বতোভাবে এই পরিবারের পাশে রয়েছে বলে স্বপন দেবনাথ জানান ।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,ঘোষনা অনুযায়ী কেন্দ্র কিংবা গুজরাট সরকার কেউই মৃত হাবিবুলের পরিবাকে এখনও আর্থিক সাহায়্য দেয় নি । মৃত বাংলার যুবককে নূন্যতম সন্মান টুকুও সেখানকার সরকারর দেয়নি বলে পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন।এও জেনেছেন, গুজরাট থেকে যুফকের মৃতদেহ বিমানে করে কলকাতায় আনার ভাড়াও গুজরাট সরকার দেয় নি । সেই খরচও পরিবারকেই বহন করতে হয়েছে। আমরা বলেছি,কেন্দ্র ও গুজরাট সরকারের ঘোষণা করা আর্থিক ক্ষতিপূরণ অর্থ যুবকের পরিবারটি যাতে পায় সেই ব্যাপারটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার দেখবে ।’।