প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩০ অক্টোবর : নাক ও মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়েছে রক্ত । দুই পায়ের চেটোতেও লেগে রয়েছে রক্তের দাগ। এমন অবস্থাতেই বাড়ির পিছন থেকে উদ্ধার হল দড়ি দিয়ে দুই পা বাঁধা ও গলায় দড়ির ফাঁস লাগানো এক তরুণীর ঝুলন্ত মৃতদেহ । মৃতার নাম দুলালী মালিক(২৪)।এই ঘটনা জানাজানি হতেই রবিবার সকাল থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার নারায়নপুর গ্রামে।খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে তদন্তে যায়।তরুণীর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য এদিনই পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে। তরুণীর মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা ,নাকি খুন,তা নিয়েই তৈরি হয়েছে রহস্য।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ)সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন ,পুলিশ তরুণীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে । তার ভিত্তিতে পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,তরুণী দুলালী মালিকদের বাড়ি জামালপুর থানার জাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়নপুর গ্রামে। তাদের পরিবারটি দরিদ্র।পাঁচ ভাই ও তিন বনের মধ্যে দুলালী সবার ছোট।বেশ কয়েক বছর আগেই সে পড়াশুনায় ইতি টেনেছে। দুলালীর বড় বোনের বিয়ে হয়েগেছে। তিনি ভাই বইরে কাজ করে । বাকি দুই ভাই থাকেন গ্রামের বাড়িতে। বাবাও থাকেন অন্যত্র। দুই ভাই গ্রামে সামান্য কিছু জমি চাষ করেন ।এই দুই ভাই সহ অপর ভাইয়েরা সামান্য টুকু রোজগার করেন তা দিয়েই তাদের সংসার চলে ।বাড়িতে ভাই-বোনেদের মধ্যে কোন ঝগড়া অশান্তিও ছিলনা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কেন দুলালীর এমন পরণতি হল সেটাই বুঝে পাচ্ছেন না প্রতিবেশী ও পরিজনরা । তাই সবাই দুলালীর এহেন মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছেন ।
মৃতার এক দাদা অরুপ মালিক এদিন বলেন, অন্য দিনের মতো শনিবার রাতে অপর বোনের সঙ্গে দুলালী ঘরে শুতে যায়। রবিবার সকালে পরিবারের অপর সদস্যরা দেখেন গালায় দড়ির ফাঁস লাগানা অবস্থায় ওই ঘরের পিছনের দিকে কার্ণিশে ঝুলছে দুলালীর মৃতদেহ।দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় তার দুটি পা ঠেকে আছে বাড়ির পাঁচিলে। দুলালীয় দুই পায়ের চেটোতে যেমন রক্তের দাগ ছিল তেমনই তার নাক ও মুখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া রক্তও স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছিল। অরূপ মালিক এও বলেন’,আমি আমার বোন দুলালীর এহেন মৃত্যুর কি কারণ থাকতে পারে তার কিছুই বুজে উঠতে পারছেন না । তবে অসুখের কারণে দিন কয়েক আগে বাড়ির একটি পোষ্য ছাগলের মৃত্যু হয়।তারপর থেকেই বোন দুলালী খুব কান্নাকাটি করছিল।ঠিক মত খাচ্ছিল না।তবে শনিবার কাজ থেকে বাড়ি ফিরে শোনেন বোন দালালী খাওয়াদাওয়া করেছে।তারপর এদিন সকালে এই ঘটনা চাক্ষেষ করে তিনিও স্তম্ভিত হয়ে যান’। তাঁর বোন দুলালীকে কেউ খুন করে ঝুলিয়ে দিতে পারে এমনটাও বিশ্বাসই করতে পারছেন না অরুপ বাবু । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পড়ায় আমাদের সঙ্গে কারুর শত্রুতা নেই । সবার সঙ্গেই আমাদের পরিবারের ভাল সম্পর্ক রয়েছে ।সবটাই তাঁর কাছে রহস্যজনক লাগছে।একমাত্র পুলিশই তদন্ত করে দুলালীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করতে পারে বলে অরুপ মালিক জানিয়েছেন ।।