প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৭ অক্টোবর : স্কুল শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে এখনও জেলেই দিন কাটছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের । দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আরো অনেক রাঘববোয়ালকেও ইতিমধ্যে জালে পুরেছে সিবিআই ও ইডি।পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও শিক্ষকতার চাকরি না পাওয়া প্রার্থীরা দিনের পর দিন ঢরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।এই সব নিয়ে বিরোধীরা প্রতিদিন তৃণমূল সরকারকে তুলোধন করছে। ঠিক এমনই সময়ে রাজ্যের সরকারি স্কুলের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষ করার পাশাপাশি বেসরকারি স্কুলের তারিফ করলেন তৃণমূল পরিচালিত পূর্ব বর্ধমানের কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত। তাঁর এহেন কটাক্ষ রাজনীতিক ও শিক্ষা মহলেও শোরগোল ফেলে দিয়েছে।প্রতিবাদ জানিয়েছে বিরোধীরাও।
কালনার বালির বাজার এলাকায় পূর্ব বর্ধমান
জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গড়ে তোলা হয়েছে
প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
বুধবার বিকালে সেই ’ফ্রি’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্ধোধন অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশের কর্তারা ছাড়াও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ,কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ ও কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্ত উপস্থিত থাকেন । অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে আনন্দ দত্ত রাজ্যের সরকারী স্কুলকে পিছনের সারিতে রেখে বেসরকারী স্কুলের পক্ষেই সওয়াল করেন । তিনি বলেন,’আমার ছেলে বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে । বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্মার্টনেস দেখলে সরকারি স্কুলগুলি লজ্জা পেয়ে যাবে।স্মার্টনেসটাইতো প্রথম দরকার ।
আমার ছেলের স্মার্টনেস দেখলে রাজ স্কুল লজ্জা পেয়ে যাবে।কালনার অন্যান্য সরকারি স্কুলগুলিও লজ্জা পেয়ে যাবে।’চেয়ারম্যানের এই মন্তব্য ঘিরে শিক্ষামহল সহ রাজনৈতিক মহলেও তৈরী হয়েছে বিতর্ক ।
শিক্ষারত্ন পুরষ্কার পাওয়া কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক তাপস কুমার কার্ফা এইবিষয়ে বলেন,’সরকারি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেই এই রাজ্যের অনেকে বিজ্ঞানী,চিকিৎসক, শিক্ষক,এমনকি দেশ ও রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন।যিনি এখন বেরসকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পক্ষে সওয়াল করছেন তিনি তো সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেই চেয়ারম্যান হয়েছেন।ওনার মুখে এইসব কথা মানায় না ।’ একই ভাবে চেয়ারম্যানের মন্তব্যের বিরোধীতা করেন কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ । তিনি দাবি করেন,’আমার দৃষ্টিভঙ্গি ওনার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমি মনে করি সরকারি স্কুল থেকে বিলিয়ন স্টুডেন্ট তৈরি হয় ।তাই সরকারি স্কুলে পড়ার জন্য আমরা সরকারি প্রতিনিধিরা আহ্বান জানাই ।’ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপত্র তথা জেলাপরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন,’রাজ্য সরকার স্কুলের পঠনপাঠনের মানোন্নয়ন ও পড়ুয়াদের জন্য একের পর এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।সেখানে সরকারি স্কুলনিয়ে ওনার (চেয়ারম্যানের)এমন ধারনা থাকাটাই বিস্ময়কর ।’
শাসক দলের নেতাদের পাশাপাশি বিরোধীরাও কালনা পুরসভার চেয়ারম্যানের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সিপিএমের কালনা শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’রাজ্য সরকার সরকারী স্কুলগুলিকে বেসরকারীকরণ করতে চাইছে।আর চেয়ারম্যান তা নিয়েই এজেন্টের কাজ করেছেন ।’ পেশায় হাইস্কুলের শিক্ষক তথা বিজেপির জেলা সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায় বলেন,’চেয়ারম্যান ঠিকই বলেছেন। কারণ ,এই রাজ্যে মোটা টাকায় শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হয়। কিন্তু যোগ্য প্রার্থীরা পরীক্ষা দিয়েও সরকারী স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পান না। এমনকি শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার হয়ে এই রাজ্যে শিক্ষামন্ত্রী জেলে দিন কাটাচ্ছে। এইসব দেখে চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তর রাজ্যের সরকারী স্কুল নিয়ে বাস্তব যে উপলব্ধি হয়েছে সেটাই তিনি তুলে ধরেছেন ।’।