প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ অক্টোবর : বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান হোক বা দলীয় সভা,সবেতেই বিজেপি নেতাদের আক্রমনের নিশানায় থাকছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।বুধবার বর্ধমানের জেলা বিজেপির বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রপদী মুর্মু চোখের চিকিৎসা করাতে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন। আর বাংলার যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় চোখের চিকিৎসার নামে বিশাল টাকা খরচ করে আমেরিকায় গিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ এই রাজ্যের সরকারটা চলছে মদের টাকায় ।’ পাশাপাশি সুকান্তবাবু দাবি করেন,পুলিশের বলেই এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস দলটা টিকে আছে। নয়তো দলটা উপে যাবে।রাজ্য বিজেপি সভাপতির এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব ।
বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে এদিন অনুষ্ঠিত হয় জেলা বিজেপির বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান।সেই অনুষ্ঠানে আগাগোড়াই তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়ান সুকান্ত মজুমদার । তিনি তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিয়ে বিষোদগার করেন ।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যেবাদী । তাই তিনি দাবি করছেন টাটাকে তিনি তাড়াননি সিপিএম তাড়িয়েছে । উনি (মুখ্যমন্ত্রী )মাঝে মাঝে এমন মিথ্যা বলেন,এটা নতুন কিছু নয় বলে সুকান্ত বাবু মন্তব্য করেন। পাশাপাশি তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়কে কটাক্ষ করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত
মছুমদার বলেন ,’যাত্রাপালায় একজন বিবেক থাকত।তিনি শুধু নীতিকথা শুনিয়ে যান । এটাও সেই রকম। তবে তোয়ালে মুড়ে টাকা না নিলেই হল’।পুলিশ ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো অস্তিত্ব নেই।পুলিশ না থাকলে তৃণমূল উপে যাবে বলে সুকান্ত বাবু এদিন দাবি করেন । আর কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, ’মল্লিকার্জুন খাড়গে কংগ্রেস সভাপতি হলেন। এমন একটা জাহাজে উনি ক্যাপ্টেন হলেন যেটা থেকে সবাই পালাচ্ছে।তবে যেই কংগ্রেস সভাপতি হন না কেন , মোদীজি আবারও প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে সুকান্তবাবু দাবি করেন“। একই সঙ্গে তিনি জানান,অনন্ত মহারাজ রাজনৈতিক কোন নেতা নন। তাঁর কাছে যে কেউ যেতে পারেন । মমতাও যান ।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমেরিকায় চোখের চিকিৎসা করাতে যাওয়া নিয়েও এদিন তোপ দাগেন সুকান্ত বাবু । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন,’দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রপদী মুর্মু চোখের চিকিৎসা করাতে সরকারি হাসপাতালে যাচ্ছেন। আর বাংলার যুবরাজ অভিষেক চোখের চিকিৎসার নামে বিশাল টাকা খরচ করে আমেরিকায় গিয়ে ঘুরে। বেড়াচ্ছেন“।চোখের চিকিৎসার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমেরিকায় যাওয়া নিয়ে এই প্রথম সুকান্ত মজুমদার কটাক্ষ করলেন এমনটা নয় । কয়েকদিন আগে বর্ধমানে বিজেপির জেলা পার্টি অফিসে
এসে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ সাংবাদিকদের বলেন,“চোখের চিকিৎসার জন্য নয় , ইডি ও সবিআইয়ের ইনট্রোগেশন থেকে থেকে বাঁচতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইউএসএ পালিয়ে গিয়েছেন ।’
কলকাতার মোমিনপুরে হওয়া অশান্তি ঘটনা নিয়ে সুকান্ত মজুমদার এদিন বলেন,’রাজ্যের হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ায় মোমিনপুরের ঘটনা নিয়ে এন আই এ (NIA)তদন্ত করছে। যাঁরা অ্যারেস্ট হবার যোগ্য তাঁরাই অ্যারেস্ট হবে ।
তৃণমূলের বিরূদ্ধে এত কথা বললেও পঞ্চায়েত
ভোটের আগে নিজের দলের কর্মীদের মনোবল যে তলানিতে পৌছেছে তা বর্ধমানে বিজয়া সম্মেলনীতে যোগ দিয়েই বুঝেযান সুকান্ত বাবু। তাই নিজের দলের নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্য সুকান্তবাবু সাফ জানিয়ে দেন,’সমাজ-মাধ্যমে নেতা হলে চলবে না। লড়াই করার শক্তি যোগাতে হবে। আপনার দুর্গ আপনাকেই রক্ষা করতে হবে।অঞ্চলকে দুর্গে পরিণত করতে হবে। ভোট লুট রুখতে পারলে তবেই সফল হওয়া যাবে। সে জন্যে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। তৃণমূল যে ভাষায় কথা বলবে আমাদেরকেও সেই ভাষাতে জবাব দিতে হবে ।’
রাজ্য বিজেপি সভাপতির এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বলেন,’বিজেপি যে মানুষের সঙ্গে মেশে না, সেটা ওই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ।’ অপরদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের অন্যতম মুখপত্র দেবু টুডু বলেন,’বাংলার উন্নয়ন আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে বিজেপি ভয় খাচ্ছে। তাই ওদের ছোট, বড়,মেজো নেতারা তৃণমূল কংগ্রেস দল দলের নেতাদের নামে মিথ্যা কথা বলে চলেছে ।’।