এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাঠানমথিট্টা,১২ অক্টোবর : কেরালায় পাঠানমথিট্টা জেলার এলানথুরের ‘মানব বলিদান’ মামলার তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে হাড় হিম করা কাহিনী । বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের পিছনে মোডাস অপারেন্ডি এক দম্পতির অল্প দিনে বড়লোক হওয়ার বাসনা এবং এক বিকৃত কাম মানুষ । তিন নরপিশাচকেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ । ধৃতদের নাম রাশেদ ওরফে মুহাম্মাদ শফি(৫২), ভগবাল সিং (৬৮) এবং ভগবালের স্ত্রী লায়লা (৫৯) । ধৃতদের মধ্যে ভগবাল একজন ম্যাসেজ থেরাপিস্ট । রাশেদ একজন মানব পাচারকারী, ধর্ষক এবং স্বঘোষিত যাদুকর যিনি দুই মহিলাকে ভুল বুঝিয়ে এনে বলিদানের মাস্টার মাইন্ড ।
রাশেদই ওই দুই মহিলাকে ভগবাল সিং ও লায়লার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কালো জাদুর নামে বলি দেয় । পুলিশ জানিয়েছে, তিনি রোজিলিকে প্রথম চলতি বছরের ৬ জুন মাসে দম্পতির বাড়িতে নিয়ে আসেন । যখন ভগবাল ও তার স্ত্রী অভিযোগ করেন যে রোজিলিকে বলি দেওয়ার পরেও তাদের জীবনে কোনও পরিবর্তন হয়নি তখন পদ্মমের কাছে যায় রাশেদ । তাঁকে একটি পর্ণ সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে এবং পারিশ্রমিক হিসাবে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে প্রলুব্ধ করে ।
রাশেদ পুলিশকে জানিয়েছে,সে পদ্মমকে ২৬ শে সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে পাথানামথিট্টা জেলার এলানথুরে ভগবাল সিং-এর বাড়িতে নিয়ে যায় । প্রতিশ্রুত মত টাকা নিয়ে তর্কাতর্কি হলে রাশেদ পদ্মমকে প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে । খুনের আগে মহিলাকে একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচার চালানো হয় । এরপর তিনজন মিলে পদ্মমের মৃতদেহ ৫৬ টুকরো করে বাড়ির আঙ্গিনায় পুঁতে ফেলে । এমনকি অভিযুক্তরা আচারের অংশ হিসাবে মৃত মহিলাদের শরীরের কিছুটা অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে খেয়ে ফেলে ।
বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কোচি পুলিশ কমিশনার সি এইচ নাগারাজু বলেছেন,’রাশেদ একজন “সাইকোপ্যাথ” এবং “বিকৃত মনস্ক’ ব্যক্তি । সে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে । ড্রাইভার, মেকানিক থেকে শুরু করে হোটেলে পর্যন্ত কাজ করেছে । অতীতে ৭৫ বছরের বৃদ্ধাকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । ধর্ষণের পর সে ওই বৃদ্ধার গোপনাঙ্গ ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল । আমরা জানতে পেরেছি যে এই দুই মহিলার ক্ষেত্রেও একই রকম নৃশংস আচরণ করেছিল মুহাম্মাদ শফি ।’
তিনি আরও বলেন,’এটা এখন প্রমাণিত হয়েছে যে সে (শফি) একজন সাইকোপ্যাথ এবং একজন বিকৃত কাম ব্যক্তি । সে যৌন আনন্দ লাভ করার জন্য যে কোনো পর্যায়ে যেতে পারে । শফি একটি ভুয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করত । ওই ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ধনী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলতো । আর এভাবেই সে ভগবাল সিং-এর সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্ব গড়ে তোলে । তারপর সে নরবলীর চক্রান্ত করে ।’
সফির কোথায় বাড়ি তা নিশ্চিত করে কেউ জানাতে পারেনি । সে পরিবার নিয়ে পেরুমবাভুরে বসবাস করছিল । পরে সেখান থেকে আলুভা চেম্বারাক্কিতে চলে আসে । বছর খানেক আগে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গান্ধী নগরে একটি ভাড়া বাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে । স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে,পারতপক্ষে প্রতিবেশীদের এড়িয়ে চলত শফি । নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে সে কোনো দিন মুখ খোলেনি । অন্যদিকে যাদের বলি দেওয়া হয়েছিল সেই রোজিলি এবং পদ্মম অত্যন্ত হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য । তাঁরা রাস্তায় লটারির টিকিট বিক্রি করে অন্নসংস্থান করতেন । কিন্তু সংসারের আর্থিক সুরাহার জন্য মুহাম্মাদ শফির কথায় ভরসা করে নৃশংসভাবে প্রাণ হারাতে হল তাঁদের ।।