এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১১ অক্টোবর : বাংলাদেশে তরুন প্রজন্মের মধ্যে বাড়ছে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণ শিবিরে ভর্তি হওয়ার প্রবনতা । আর মাদ্রাসার আড়ালে চলছে তাদের নিয়োগ । এমন ৩৮ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রকাশ করল বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) । ধৃতদের তালিকায় রয়েছে ঢাকার সূত্রাপুরের রাকিব হাসনাত ওরফে সুমন (২৮), পটুয়াখালীর কুয়াকাটার মো. হোসাইন (২২) ও নোয়াখালীর মো. সাইফুল ইসলাম । এছাড়া তাদের সন্ত্রাসবাদে উদ্বুদ্ধ করার অভিযোগে রবিবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে শাহ মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩২) ও নেয়ামত উল্লাহ (৪৩) নামে মাদ্রাসার দুই শিক্ষককে । ধৃতরা “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়া” নামে একটি নতুন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সদস্য বলে জানিয়েছে র্যাব ।
সুত্রের খবর,গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা থেকে ৮ কলেজছাত্র নিখোঁজ হন । কিছুদিন পর তাঁদের একজন ফিরে এলে এই তরুণদের সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে ‘হিজরতের’ নামে ঘরছাড়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে । এদিকে জলঘোলা হতেই কুমিল্লা শহরের কুবা মসজিদের ইমাম শাহ মো. হাবিবুল্লাহ আত্মগোপন করেন । বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেও নড়েচড়ে বসে র্যাব । এরপর ৫ অক্টোবর ৭ জন সন্ত্রাসবাদী যুবককে গ্রেফতার করা হয় । ওই সাত জনের মধ্যে ৪ জন কলেজ পড়ুয়া বাকি ৩ জন সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন সোমবার ঢাকায় একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন,প্রাথমিকভাবে জানা গেছে কুমিল্লার কুবা মসজিদের শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব ২০২০ সালে নেয়ামত উল্লাহর মাধ্যমে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সংগঠনটিতে যুক্ত হয়েছিলেন । তারপর থেকে তিনি সন্ত্রাসবাসের জন্য অর্থ সংগ্রহ ও তরুন প্রজন্মকে সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণের জন্য উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেন । পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্র সংগ্রহ করে তাঁর মাদ্রাসায় এনে রাখতেন। এযাবৎ তিনি ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণে পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে । অন্যদিকে নেয়ামত উল্লাহ কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন । তিনি ২০১৯ সাল থেকে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হন । হাবিবুল্লাহর মত তিনিও সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডে অর্থ সংগ্রহ ও তরুন প্রজন্মকে সন্ত্রাসবাদে উদ্বুদ্ধ করে প্রশিক্ষণ শিবিরে পাঠানোর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন ।
তিনি বলেন,’,বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার দুর্গম অঞ্চলে খোলা হয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ শিবির । তরুনদের প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁদের বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে । দেওয়া হয়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলারও প্রশিক্ষণ ।’ মঈন জানান,বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনী যৌথ অভিযান শুরু হতেই জঙ্গি গোষ্ঠীটি ঠেক বদল করতে শুরু করে দিয়েছে ।
সংবাদিক সম্মেলনে র্যাবের তরফ থেকে দেওয়া দেশ জুড়ে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী,বাংলাদেশের ১৯ জেলা থেকে এযাবৎ ৫৫ জন তরুন ঘর ছেড়েছেন । তাঁদের মধ্যে ৩৮ জনের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করেছে র্যাব । যদিও দুই দফায় গ্রেপ্তার ১২ জন এই তালিকার বাইরে ।কিন্তু স্থানীয়দের আশঙ্কা র্যাবের দেওয়া পরিসংখ্যানের বাইরেও বহু যুবক সন্ত্রাসবাদী প্রশিক্ষণের জন্য ঘর ছেড়েছেন ।
এদিকে বাংলাদেশে ধরপাকড় হতেই সংগঠনটি ভারতের মিজোরামে ঠেক গড়ার মতলব করেছে বলে খবর । ফলে চিন্তার ভাঁজ ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের ।।
ছবি ও তথ্য : প্রথম আলো