প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ অক্টোবর :বাংলার দুর্গাপুজোকে আবহমান ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো।সেই স্বীকৃতিকে মান্যতা দিয়ে এইবছর জেলায় জেলায় পুজো কার্নিভাল আয়োজনের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।সেই মত রাজ্যের অন্যান জেলার পাশাপাশি শুক্রবার বিকালে শহর বর্ধমানেও সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হল মা কার্নিভাল ।যে কার্নিভাল দেখতে সুদূর মুম্বাই থেকে বর্ধমানে হাজির হয়েছিলেন মুখ্য অতিথি তথা বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডে।কার্জনগেট এলাকায় থাকা কার্নিভালের মূল মঞ্চে চাঙ্কি পাণ্ডেকে পাশে নিয়ে বসে তার কাছে বাংলার দুর্গা পুজোর জৌলুশ ও মাহাত্ম ব্যাক্ষা করেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।দুর্গাপুজো কার্নিভাল দেখে উচ্ছশিত অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডে এদিন মঞ্চে বসেই কার্নিভালে অংশ নেওয়া সবাইকে শুভেচ্ছা জানান ।এমনিকি তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলেন, “জয় দুর্গা মাইকী। এমন সুন্দর কার্নিভাল দেখে আমি অভিভূত। আই লাভ বর্ধমান”।
দুই মহিলা পরিচালিত পুজো কমিটি সহ মোট ৩১ টি পুজো কমিটি এদিন বর্ধমানে অনুষ্ঠিত মা কার্নিভালে অংশ নেয়। কার্নিভাল দেখতে এদিন শহরের উপর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডের প্রায় ৪ কিমি রাস্তার দুই ধারে অগুনিত মানুষ ভিড় জমান।
বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডে ও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ছাড়াও জেলা শাসক প্রিয়াংকা সিংলা, জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীস সেন সহ জেলার অন্য সকল বিধায়ক ও প্রশাসনিক কর্তারা কার্নিভালে অংশ নেন । হুড খোলা জিপে চড়ে হাত নেড়ে সবাইকে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে কার্জনগেট এলাকায় থাকা কার্নিভালের মূল মঞ্চে পৌছান চাঙ্কি পাণ্ডে।
বলিউড অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডে উদ্বোধন করার পর বিকাল পাঁচটা কুড়ি মিনিটে জিটি রোডে বর্ধমানের পুলিশ লাইন সংলগ্ন সৎসঙ্গ মোড় থেকে কার্নিভাল শুরু হয়।কার্নিভালের জন্য শহর বর্ধমানের বিস্তির্ণ রাস্তা নানা রঙের আলোয় সাজিয়ে তোলা হয় । কার্নিভালে অংশ নেওয়া প্রতিটি পুজো কমিটির কলাকুশলীরা কার্জন গেটের মূল মঞ্চের সামনে তিন মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। চার কিমি পথ পরিক্রমা করে কার্নিভাল শেষ হওয়ার স্থান নির্দিষ্ট করা হয় শহরের পাঞ্জাবিপাড়া মোড় এলাকা।কার্নিভাল সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতে এদিন দুপুর থেকে জিটি রোডে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রন করা হয় ।শহর জুড়ে মোতায়েন করা হয় হাজার খানেক পুলিশ বাহিনী।অ্যাম্বুলেন্স সহ পানীয় জলেরও ব্যবস্থা রাখা হয় । মা কার্নিভালের জন্য এদিন গোটা শহর বর্ধমান কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় । জিটি রোড-বিসি রোড দোকানে ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নানা বিধিনিষেধের মধ্যে অনেকটা রাত পর্যন্ত কার্নিভাল চলায় বহু মানুষকে ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়।
যদিও জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন,’সবাই মিলে সুষ্ঠুভাবে কার্নিভাল করতে পেরেছি।’
বর্ধমানের মা কার্নিভালের শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হয় বাংলার বিভিন্ন শিল্প ও কৃষ্টি। তার মধ্যে অন্য ছিল ছৌ নাচ, মহিলা ঢাকি,রণপা ও আদিবাসী নাচ । এছাড়াও নারীশক্তির জয়, ক্যারাটে প্রদর্শন পরিবেশ দূষণ,বর্ধমানে ‘ভারত দর্শন’, ‘খেলা হবে’, ‘তুমি আমাদের দুর্গা’, ‘আমার দুর্গা নবরূপে’, সুন্দরবন-সহ নানারকম থিমে শোভাযাত্রাকে সাজিয়ে তুলেছিলেন কার্নিভালে অংশ নেওয়া পুজো উদ্যোক্তারা। এমনকি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পও উদ্যোক্তারা শোভাযাত্রায় তুলে ধরেন ।প্রতিটি পুজো কমিটি আলাদা আলাদা রঙের পোশাক পড়ে কার্নিভালের শোভাযাত্রায় অংশে নিয়েছিলেন।
কার্নিভালের আয়োজন নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’বিভিন্ন কাজে প্রতিদিন প্রতিবেশী ছেলার হাজার হাজার মানুষও বর্ধমানে আসেন । কার্নিভালের জন্য এদিন বহু মানুষকে ভোগান্তি পোয়াতে হল ।’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস সরকারের দাবি করেন,’কার্নিভালের আয়োজন করে কি আর মানুষের জীবনযাত্রা বদলে ফেলা যাবে?কার্নিভালের জন্য সব রকম যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলা হয়েছে।’ যদিও রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন,’বহু মানুষের ভিড় প্রমাণ কর দিয়েছে , কার্নিভালকে বর্ধমান শহরের মানুষ কতটা আপন করে নিয়েছে ।’ এদিকে কার্নিভাল চলাকালীন ক্ষোভ প্রকাশ করে মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ সরকার। তিনি বলেন,’কার্নিভাল খুব ভাল হচ্ছে, আমার কারো বিরুদ্ধে ক্ষোভ বা রাগ নেই। তবে আমার একটাই দুঃখ, দু’মাস ধরে পৌরকর্মীরা কার্নিভালের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করলেন।রাস্তা পরিস্কার করা থেকে শুরুকরে দুর্গাপুজো ও কার্নিভালের জন্য তারা সবকিছু করলেন। কিন্তু এদিন কার্নিভালের মঞ্চ থেকে একবারের জন্যও পৌরকর্মীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হলো না।এটাই দুঃখের ।’।