শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),০৭ অক্টোবর : ‘আমার শ্রাদ্ধে ওকে(প্রেমিকা) নিমন্ত্রণ করো । বলো,ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নাও এবার’-প্রেমে ব্যর্থ হয়ে নিজের মা’কে চিঠি লিখে জানিয়ে গেলেন আত্মঘাতী প্রেমিক। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার পিপলন গ্রামে । পুলিশ জানিয়েছে,নিহতের নাম বিক্রম চন্দ্র (১৯) ওরফে বিট্টু । শুধু তাইই নয়, সুইসাইড নোটে প্রেমিকাকে মৃত্যুর জন্য দায়ি করে গেছেন অভিমানী প্রেমিক ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,মন্তেশ্বর থানার পিপলন গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তাপস চন্দের একমাত্র ছেলে বিক্রম । তাপসবাবুর এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে । বর্ধমানের একটি বেসরকারি কলেজে ডিপ্লোমা কোর্স করছিলেন বিক্রম । হোস্টেলে থেকে তিনি পড়াশোনা করতেন । অন্যদিকে বিক্রমের প্রেমিকার বাড়ি পিপলন গ্রামের পার্শ্ববর্তী ধান্যখেড়ুর গ্রামে । জানা যায়,হাইস্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই ধান্যখেড়ুর গ্রামের বাসিন্দা ওই মেয়েটির সঙ্গে বিক্রমের পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল । তারপর উচ্চ মাধ্যমিকের পর দু’জন পৃথক দুই কলেজে ভর্তি হয় । কিন্তু ফোনে নিয়মিত কথা হত তাঁদের ।
পরিবার সুত্রে জানা গেছে,দূর্গাপূজো উপলক্ষে বাড়ি এসেছিলেন বিক্রম । তারপর থেকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন । বৃহস্পতিবার রাত্রি সাড়ে এগারোটা নাগাদ মা-বাবার সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করে সে নিজের ঘরে চলে যায় । কিন্তু এদিন অনেক বেলা পর্যন্ত ঘর না খোলায় পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হয় । তারপর প্রতিবেশীদের সহায়তায় ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকতেই তাঁরা বিক্রমকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান । বিক্রমের বিছানাতে রাখা ছিল তাঁর সুইসাইড নোটটি ।
নিজের মা’কে উদ্দেশ্য করে ওই চিঠিতে লেখা আছে, ‘মা,আমি বাধ্য হয়ে এই কাজটা করলাম । তোমরা আমায় ক্ষমা করো । এই কাজটা করার পিছনে রয়েছে শুধুমাত্র আমার ভালোবাসার মানুষ । সে আমাকে প্রতিনিয়ত সুইসাইড করবে বলছে এবং তার একমাত্র দায় নাকি আমার থাকবে । মা, আমি এই অপবাদ নিয়ে জেলে যেতে পারবো না । তোমাদের কোনো সম্মান নষ্ট করতে দেবো না । আমি মরে যাওয়ার পর শ্রাদ্ধে ওকে নিমন্ত্রণ করবে । শুধাবে যে, ‘এবার শান্তি হয়েছে তোমার ? ভালো ছেলে দেখে এবার বিয়ে করে নাও ।’ শুধু তোমার ছেলেটার জন্য তোমার মন খারাপ করবে । তোমার ছেলেটা তোমার হৃদয় । ভালো থেকো তোমরা । আমি এলাম । ইতি তোমার বিট্টু ।’
শুক্রবার সকালে খবর পেয়ে যুবকের মৃতদেহটি উদ্ধার করে আনে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ । পরে ময়নাতদন্তের জন্য কালনা মহকুমা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় । যদিও এনিয়ে থানায় নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানা গেছে । একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করেছে পুলিশ । মর্মান্তিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ পরিবার পরিজন ও গোটা গ্রাম ।।