নীহারিকা মুখার্জ্জী,হুগলি,০৪ অক্টোবর : দুর্ঘটনাটা না ঘটলে হয়তো পুজো বন্ধ হয়ে যেত। অনেক কষ্ট করে সবেমাত্র কয়েক বছর আগে পাড়ায় পুজো শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই দুর্ঘটনা। ঠাকুর তলার প্যাণ্ডেলের বৈদ্যুতিক লাইনে গণ্ডগোল । যেকোনো মুহূর্তে আগুন ধরে বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারত। কেউ কোথাও নেই। হঠাৎ দ্যাখা গেলো একটা বাচ্চা মেয়ে সবাইকে বিপদের খবর দিলে সবাই ছুটে আসে প্যাণ্ডেলে। মেয়েটি তাদের অচেনা হলেও তার বাড়ি কোথায় সেটা জানার মত সময় তাদের হাতে ছিল না। বৈদ্যুতিক লাইন মেরামত করার পর মেয়েটির কথা সবার মনে পড়ে। কাছাকাছি মেয়েটিকে দেখতে না পেয়ে শুরু হয় তার খোঁজ। কিন্তু কোথাও তাকে আর পাওয়া যায়নি। এতবড় বিপর্যয়ের হাত থেকে যে তাদের রক্ষা করল তাকে দেখতে না পেয়ে সবার মন যখন বিষণ্ন ঠিক তখনই পাড়ার একজনের লক্ষ্য পড়ল ঠাকুরের ঘটের দিকে। সবাই অবাক হয়ে দেখল মেয়েটি যে জুতো জোড়া পড়েছিল সেটি পড়ে রয়েছে সেখানে। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই প্রবীণরা মনে করল – স্বয়ং মা দুর্গা বাচ্চা মেয়ের রূপ ধরে নিজের মণ্ডপ রক্ষা করেছেন এবং প্রমাণ স্বরূপ নিজের জুতো জোড়া রেখে গেছেন। সেই থেকে মায়ের পুজোর সঙ্গে সঙ্গে জুতো জোড়ারও পুজো হয়। আর্থিক কারণে পুজো বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও আজও সেটা চলে আসছে ।
বৈদ্যবাটির অন্যান্য পাড়ায় পুজো হলেও মিত্রবাগান পাড়ায় কোনো পুজো হতোনা। ফলে ছোটদের মনে একটা আফসোস থেকে গিয়েছিল। অন্যরা যখন নিজেদের পাড়ার পুজোয় আনন্দ করছে ওরা তখন ঘরের কোণে চুপটি করে বসে আছে। অবশেষে পাড়ার সবার উদ্যোগে সাঁইত্রিশ বছর আগে শুরু হয় দুর্গাপুজো।
প্রথম থেকেই তিনটি পৃথক পাটাতনে মা এখানে আসেন – একটাতে মহিষ ও অসুরের সঙ্গে মা নিজে থাকেন। অন্য দুটিতে থাকে তার সন্তানরা। সপ্তমীর দিন কলাবৌকে স্নান করিয়ে যখন গঙ্গা থেকে ঘট আনা হয় তখন পাড়ার সমস্ত পরিবারের সদস্যরা তাতে পা মেলায়। প্রথম থেকেই এখানে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। ফলে কখনো ছাগ বলি হয়নি। দশমীতে ঠাকুর বরণ করার পর সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে আট থেকে আশি – প্রত্যেকেই। সত্যিই সে এক সুন্দর দৃশ্য। বিসর্জনের সময় বিশাল প্রশেসন বের হয়।
পুজোর সময় প্রতি বছরই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তাতে পাড়ার ছেলেমেয়েরাই অংশগ্রহণ করে।
আড়ম্বর নয় এখানকার পুজোর মূল সুর হলো আন্তরিকতা ও ভক্তি। সেটাকেই পাথেয় করে পুজো হয়। তবে মায়ের জুতো জোড়া দেখার জন্য আশেপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ এখানে ভিড় করে। অন্য সময় দেখা গেলেও পুজোর সময় জুতো জোড়া ঢাকা থাকে। তখন যে মায়ের সঙ্গে জুতো জোড়ারও পুজো হয় ।
পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য আকাশ কর্মী বললেন, ‘আমাদের পুজোর মধ্যে থিম বা আলোর ঝলকানি না থাকলেও আছে আন্তরিকতা ও ভক্তি। সেটাকে পাথেয় করেই কষ্ট করেও আমরা পুজোর আয়োজন করে চলেছি। আমাদের বিশ্বাস মায়ের ঐ জুতো জোড়া আমাদের সব সমস্যা দূর করবে ।’।