শ্যামসুন্দর ঘোষ,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),০২ অক্টোবর : বাড়ির সামনে কীর্তন করায় ৩ কীর্তনিয়াকে ব্যাপক মারধরের অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তর বিরুদ্ধে । মনোরঞ্জন সাহা নামে জনৈক এক ব্যক্তি ওই তিন কীর্তনিয়ার ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট করে ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন । তাঁর এই পোস্ট ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । মনোরঞ্জনবাবু ফেসবুকে লিখেছেন,’ষষ্টীর দুপুরে কালনার পৌরপতি আনন্দ দত্তের হাতে আক্রান্ত তিন বৈরাগী৷ তাঁদের দোষ তাঁরা পৌরপতি আনন্দ দত্তের বাড়ির সামনে নামগান করে ভিক্ষা চেয়ে ছিলেন ৷ তিন জনের মধ্যে যিনি খোল বাজাচ্ছিলেন, প্রথমে তাঁর নাকে ঘুষি মারেন ৷ ঘুষি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে, ব্যক্তিটির তলপেটে এলোপাথারি লাথি চালাতে থাকেন৷ নাক দিয়ে দড়দড় ধারায় রক্ত বেড়িয়ে আসে৷ এলাকার মানুষজন এগিয়ে এসে বৈরাগীদের বাঁচান ৷ এই অধমও এর স্বাক্ষী৷’ তিনি আরও লিখেছেন,’তিন বৈরাগী ফিরে যাবার সময় বলেন ৷ আমরা আইনের দ্বারস্থ হবো না৷ কালনা মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দের স্থান ৷ আমারা এই অপমান, মহাপ্রভু এবং প্রভু নিত্যানন্দের চরণে অর্পন করে গেলাম ৷ ওনারাই আমাদের জগতে সর্বচ্চো বিচারক ৷ এই ঘটনায় এলাকায় ছিঃ-ছিক্কার পড়ে গেছে৷ কিন্তু প্রকাশ্যে অনেকে বলতে ভয় পাচ্ছে ।’
মনোরঞ্জন সাহার ফেসবুক পোস্ট
জানা গেছে,প্রহৃত তিন কীর্তনিয়ার নাম লক্ষণ বৈরাগ্য,তপন অধিকারী ও রনজিৎ বৈরাগ্য । তাঁদের বাড়ি কালনা মহকুমার পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভার লক্ষ্মীপুর বৈরাগ্য পাড়ায় । শনিবার মহাষষ্ঠীর দিন ওই তিনজন কালনায় এসেছিলেন । মহাপ্রভুর বাড়ি, নিত্যানন্দ প্রভুর বাড়িতে গিয়ে খোল করতাল সহযোগে কীর্তন করার পর নগর পরিক্রমায় বেড়িয়ে পড়েছিলে । কালনার ১০৮ শিবমন্দিরের আশপাশের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা চাইছিলেন ।
ফেসবুকে পোস্টকারী মনোরঞ্জন সাহাকে রবিবার ফোন করা হলে তিনি বলেন,’১০৮ শিবমন্দিরের সামনেই বাড়ি কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তর । ওই তিন কীর্তনিয়া দুপুর ১২ টা সাড়ে ১২ টা নাগাদ চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে খোল বাজিয়ে কীর্তন করার পর ভিক্ষা চান । তখন চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে কীর্তনিয়াদের খোল লাথি মেরে ফেলে দেয়৷ লক্ষণের নাকে ঘুঁসি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয় । রঞ্জিত ও তপন তখন ভয়ে ছুটে পাশের একটা চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ে৷ আমি গিয়ে রক্ত ধুয়ে দিই৷ তারপর তিন কীর্তনিয়ার ঠিকানা জিজ্ঞাসা করি ।’ তিনি বলেন,’চেয়ারম্যান বেলা ১২ টা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ঘুমোন । আর ওই সময় বাড়ির সামনে কীর্তন করায় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটেছে । সেই রাগেই তিনি এই কান্ড করেছে বলে অনুমান ।’
এদিকে এই ঘটনার কথা চাওড় হতেই তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায় । এলাকার বাসিন্দারা নিন্দায় সরব হয়েছেন । ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন বর্ধমান জেলার বিজেপির ইনচার্জ কৃষ্ণ ঘোষ । তিনি বলেন,’পশ্চিমবঙ্গে কেউ সুরক্ষিত নয় । কারোর সম্মান নেই । কারন এই সরকার মানুষকে গোলাম মনে করে । এদের নেতারা যত অন্যায় করুক না কেন এদের বিরুদ্ধে কিচ্ছু করা যাবে না । এমনকি ধার্মিক মানুষের উপর অত্যাচার করলেও কেউ ভয়ে মামলা পর্যন্ত করতে পারে না । কারন যদি মামলা করে তাহলে তৃণমূলের নেতারা গিয়ে তাদের শাসাবে । আজ খোলে লাথি মেরেছে । ভবিষ্যতে আরও কিছু করবে ওরা ।’ কৃষ্ণবাবু বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নাম না করে বলেন,’বীরভূমের এক তৃণমূল নেতা একজন বড় চোর । আজ সে জেলে আছে। তাকে বীরের সম্মান দেবে বলছে । তাহলে এরাজ্যে সাধুসন্ন্যাসীরা কি করে সম্মান পাবে? এটা চোরেদেরই রাজ্য । চোরেরাই সম্মান পাবে এখানে ।’
অন্যদিকে অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে কালনা পুরসভার চেয়ারম্যান আনন্দ দত্তকে একাধিকবার ফোন করা হয় । তবে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মতামত জানা সম্ভব হয়নি ।।