জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী : ভারতের রাজনীতির অন্যতম সমস্যাগুলো কী কী ? উত্তর – দূর্নীতি ও দলবদল। অনেক দিন ধরেই এই দুটি সমস্যা চলে আসছে। দলবদল মানে তো সরাসরি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। মানুষ কোনো একটা দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর ব্যক্তিগত পরিচয়ের পরিবর্তে তার দলীয় পরিচয়টা বড়। অথচ ভোটে জেতার পর দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অর্থের বিনিময়ে অথবা অন্য কোনো প্রলোভনের বশবর্তী হয়ে দলত্যাগ করছে।
বলা হয় যে ঘুষ নিচ্ছে এবং যে দিচ্ছে – তারা দু’জনেই সমান অপরাধী। একই নীতি প্রযোজ্য হওয়া উচিত দলত্যাগের ক্ষেত্রে। যে দলত্যাগ করছে এবং যারা তাকে দলে নিচ্ছে – অপরাধ তাদের দু’জনেরই। সুতরাং শাস্তি দুজনেরই পাওয়া উচিত।
দলত্যাগ রোধ করার জন্য প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সময় একটা আইন চালু হয়েছিল। কিন্তু তাতে ছিল অনেক ফাঁক। সেই ফাঁক দিয়েই একের পর সাংসদ বা বিধায়ক দলত্যাগ করছে এবং তাকে যারা ভোট দিয়েছিল ও যারা দেয়নি তাদের উভয়ের সঙ্গেই প্রতারণা করল। অথচ এই প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কোনো দলই সক্রিয়ভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে না।
বর্তমানে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৌলতে দলবদল খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকেই একে কুখ্যাত ‘অপারেশন লোটাস’ বলছে। তারা শুরুটা করেছিল মধ্যপ্রদেশ দিয়ে। একদল ক্ষমতালোভী কংগ্রেস বিধায়ককে টাকা বা অন্য কিছুর ভয় দেখিয়ে কংগ্রেস ত্যাগ করতে বাধ্য করে। তারা দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দেয় এবং সরকার গঠন করে। শোনা যায় মহারাষ্ট্রে সরকার ভাঙার জন্য প্রায় তিনহাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। এবার হয়তো নজর রাজস্থানে। যারা দলে কোনো পদ না পেয়ে দলত্যাগ করছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা বলে কিছু আছে কি? যদি দেখা যায় দলের কোনো দীর্ঘদিনের যোগ্য কর্মীর বদলে অন্য দল থেকে আগত কাউকে সুযোগ দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে প্রতিবাদ স্বাগত।
বাম আমলে বিধায়কদের দলবদল না দেখা গেলেও চাপের মুখে কংগ্রেস কর্মীরা দলত্যাগ করে সিপিএমে যোগ দিয়েছে। তবে ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতা লাভ করার পর এই রাজ্যে দলবদল খুব স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। কংগ্রেসের অনেক বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেয়।২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে এই রাজ্যে তৃণমূলের একগুচ্ছ বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেয়। কে যে কখন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছে সেটা টের পাওয়া যাচ্ছিল না। এদের একটা বড় অংশ অবশ্য কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য দলত্যাগ করে। যেমন নারদা কাণ্ডে শুভেন্দুকে টাকা নিতে দেখা গেলেও অন্যরা সিবিআইয়ের ডাক পেলেও সে কিন্তু পায়নি। ঠাট্টা করে লোকে বলে ‘ওয়াশিং ম্যাশিন’-এ সে পাপ মুক্ত হয়েছে । মন্ত্রীত্ব হারিয়ে বিজেপির বাবুল সুপ্রিয় ঢুকে পড়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস শিবিরে । ভোটে জেতার পর তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটে জায়গাও পেয়ে গেছেন । পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল থেকে বিজেপি,কিছুদিন পরেই ফের বিজেপি থেকে তৃণমুলে যাওয়াটা জলভাত হয়ে গেছে ।
যাই হোক দলবদল বন্ধ করতে হলে অবশ্যই কড়া সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যারা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ছিনিমিনি খেলে আর যাই হোক তারা মানুষের ভাল করতে পারেনা। যদি কোনো জনপ্রতিনিধি বা দলীয় পদাধিকারী দলত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দেয় তাহলে পরবর্তী পাঁচ বছর নতুন দলে তার পদ পাওয়া বন্ধ করতে হবে। এমনকি ঐ সময় কোনো নির্বাচনে সে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। যদি নতুন দল গঠন করে সরকার গড়তে চায় তাহলে সমর্থনকারী কোনো দল থেকে মন্ত্রী পদ দেওয়া যাবে না। কারণ তাদের দলত্যাগ ব্যক্তিগত স্বার্থে, কোনো মহৎ উদ্দেশ্যে নয়। এমনকি পাঁচ বছর আগে পুরনো দলে ফিরে আসার পথও বন্ধ করতে হবে। দলবদলুরা কোনো দলের সম্পদ হতে পারেনা। সমস্যা হলে সমস্ত দল থেকে সিনিয়র জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কেন্দ্রে বা রাজ্যে কমন সরকার গঠন করা হোক। মনে হয়না ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দলগুলো রাজী হবে !!!!