শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২৬ সেপ্টেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাচীন দূর্গা পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম মন্তেশ্বর থানার কুসুমগ্রাম পঞ্চায়েতের সিঙ্গালী গ্রামের রায় পরিবারের দূর্গা পূজো । আউশগ্রামের অমরারগড়ের রাজা ‘ভল্লুপদ’-এর বংশধর হল এই রায় পরিবার । আর রাজবংশের কুলদেবী হল দেবী শিবাখ্যা । কষ্ঠি পাথরের মূল দেবীমূর্তি অমরারগড়ে পূজিতা হলেও, এখানে কলাগাছকে দেবী শিবাখ্যা রূপে পূজো করেন সিঙ্গালী গ্রামের রায় পরিবার । মহালয়ার একসপ্তাহ আগেই শিবাখ্যার পুজো শুরু হয়। শাক্তমতে পুজো হয় দেবী শিবাখ্যার। পূজোর দিনগুলিতে ৭-৮ টি ছাগ বলি দেওয়া হয় । গ্রামের ব্রাহ্মণদের বাড়িতে মাথায় করে নৈবেদ্য পৌঁছে দেয় পরিবারের লোকজন । প্রায় চার শতাব্দী ধরে একই রীতিনীতি মেনে পূজো করে আসছেন সিঙ্গালী গ্রামের রায় পরিবার ।
আউশগ্রামের অমরারগড়ের ‘ভল্লুপদ’ রাজ বংশের অন্যতম রাজা মহেন্দ্র দেবী শিবাখ্যার পূজার সূচনা করেছিলেন । কথিত আছে,রাজা মহেন্দ্র স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাটোয়ার খাজুরডিহি জগৎ সিংহের বাড়ি থেকে দেবী দশভূজার কষ্ঠি পাথরের দেবীমূর্তি বলপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে এসেছিলেন । তারপর মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর প্রচলন করেন ।
মন্তেশ্বরের সিঙ্গালী গ্রামের রায় পরিবারের প্রবীন সদস্য নীলকন্ঠ রায় বলেন,’রাজা মহেন্দ্রর বংশধররা পরবর্তীকালে রায় উপাধি পেয়েছিল । রাজা মহেন্দ্রর তিন পুত্র । তাঁদের মধ্যে একজন প্রায় ৪০০ বছর আগে সিঙ্গালী গ্রামে দেবী শিবাখ্যার পূজোর প্রচলন করেছিলেন ।’
তিনি বলেন,’রাজা মহেন্দ্রর ওই পুত্র অর্থাৎ আমাদের পূর্ব পুরুষ ব্যবসা বানিজ্য করতেন । আর ব্যবসা হত মূলত নদীপথে । অমরারগড় থেকে খড়ি নদী হয়ে মন্তেশ্বরে ব্যবসা করতে আসতেন আমাদের পূর্ব পুরুষ । কিন্তু ব্যবসার সুবিধার জন্য তিনি সিঙ্গালী গ্রামে বসবাস শুরু করেন । আর তিনিই এখানে কুলদেবী শিবাখ্যার পূজোর প্রচলন করেন । মন্দির নির্মান করেছিলেন তিনি । কালক্রমে টেরাকোটার ওই মন্দিরটি ভেঙে যায় । আমরা ফের ওই জায়গায় নতুন নির্মান করেছি ।’
জানা গেছে,ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে দেবীর বাৎসরিক পূজোর সূচনা হয় । চলে দশমী পর্যন্ত । রায় পরিবারের বংশধরদের অধিকাংশ কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পূজোর ক’টা দিন তাঁরা সিঙ্গালী গ্রামে পৈতৃক ভিটেছে চলে আসেন । পূজোতে গ্রামের প্রচুর মানুষকে পাত পেড়ে ভোগ খাওয়ানো হয় ।।