এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাটনা,২৩ সেপ্টেম্বর : পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বিহারে হুহু করে বেড়েছে বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা । বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বহু ব্লকে জনসংখ্যার আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে । বিহারের এমন কিছু ব্লক আছে যেগুলি বর্তমানে কার্যত হিন্দু শূণ্য । অভিযোগ উঠছে,ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর লোভে জেনেশুনেও না দেখার ভান করে রয়েছেন বিহারের ক্ষমতাসীন দল । নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বিহারের সীমান্তবর্তী কিষাণগঞ্জ জেলা বর্তমানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ । কাটিহার ও আরারিয়ায় যেভাবে দ্রুত হারে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে এই জেলাগুলিও অদূর ভবিষ্যতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কাটিহার জেলার বারসোই ব্লকে হিন্দু জনসংখ্যা ১৯৬১ সালে ছিল ৪৩,৫৪৯ জন, যা ২৯৭১ সালে ৪০,৯৬৯ -এ নেমে আসে । ২০২২ পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা কোথায় দাঁড়িয়েছে তার হিসাব নেই । কারন ২০১১ সালের পর দেশে জনগননা হয়নি । তাতেও বেশ কিছু আঞ্চলিক দল বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠছে ।
আর এই অনুপ্রবেশের সমস্যা কথা ১৯৮১ সালের ২২ জুলাই বিহার বিধানসভায় তুলেছিলেন তৎকালীন জনতা পার্টির বিধায়ক গণেশ প্রসাদ যাদব । ওই বছর বিজেপির বিধায়ক জনার্দন তিওয়ারীও এনিয়ে সরব হয়েছিলেন । পূর্ণিয়ার প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক অজিত সরকার বিপুল সংখ্যক অনুপ্রবেশকারীদের বিহারে আসার কথা বলেছিলেন । পরে ১৯৯২ সালের জুলাই মাসে বিজেপি বিধায়ক সুশীল কুমার মোদীও বিহারের ১২ জেলায় অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন । কিন্তু পরে ২০০৯ সালে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার পূর্ণিয়ার একটি সভায় অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করেছিলেন ।
এমনকি ২০২০ সালে কেন্দ্র সরকার এনআরসির প্রস্তাব দিলে বললে নীতিশ কুমার তা ফিরিয়ে দেন । ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বিহারে নীতীশ সরকারের মন্ত্রী রামসুরত রাই বলেছিলেন যে অনুপ্রবেশকারীরা এসে মঠ, মন্দিরের জমি দখল করছে । আর এই সত্য কথা বলায় তাঁকে সরকার থেকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি তুলেছিল জেডিইউ ।
নীতিশ কুমার ও তাঁর পূর্ববর্তী সরকারের এই ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কারনে বিহারের বহু জেলায় জনসংখ্যার আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে । সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে জাতীয় স্তরে মুসলিম জনসংখ্যা যেখানে ৪.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল সেখানে ওই সময়কালে বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৩.৫৮ শতাংশ । ১৯৫৬ সালে রাজ্য পুনর্গঠনের পর কিছু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লক ও পঞ্চায়েত পশ্চিমবঙ্গকে দেওয়া হয়।
১৯৬১ সালে বর্তমান কিষাণগঞ্জের ৭ টি ব্লকের মধ্যে যেখানে ২ টিতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল । কিন্তু বর্তমানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্লকে পরিণত হয়েছে । বিগত পাঁচ দশকে এখানে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৪.১৯ শতাংশ । কিষাণগঞ্জের মতোই কাটিহার জেলার বারসোই ব্লকেও মুসলিম জনসংখ্যা ১৬.৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে । গত মাসে কাটিহার রেলস্টেশনে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মহিলা ধরা পড়ে, যাদেরকে বাংলাদেশি নজরুল দিল্লিতে পাঠিয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ । গত বছরের অক্টোবরে দিল্লিতে গ্রেপ্তার হওয়া পাকিস্তানি আশরাফের কাছ থেকে পাওয়া পাসপোর্টটি কিষাণগঞ্জের এক পঞ্চায়েতের প্রধান তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায় । বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের রাজ্যের এক শ্রেণীর নেতারাই আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড তৈরি করে দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন করে তুলেছে ।
শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই অনুপ্রবেশকারীরা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি,বরঞ্চ তারা ভারতীয় কর্ম সংস্থানের জায়গাও দখল করছে । বাংলাদেশ থেকে নপুংসকরা পাটনায় এসে ভারতীয় হিজড়ারাদের চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছে। গত বছর পাটনায় ভারতীয় হিজড়ারা এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন । অনুব্রবেশের কারনে এদেশীয়রা বিভিন্নভাবে সমস্যায় পড়লেও ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ানোর লোভে নীতিশ কুমার ও তার দল পরিকল্পিতভাবে অনুপ্রবেশ হতে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ । কারন পাটনা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও দু’একটা জেলা বাদ দিয়ে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে অনুপ্রবেশকারীদের তথ্য আজও আদালতে জমা দেওয়া হয়নি । পূর্ণিয়া, কিষাণগঞ্জ, কাটিহার এবং আরারিয়ার অনেক ব্লক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কারণে মুসলিম অধ্যুষিত ব্লকে পরিণত হয়েছে। আর তাদের অত্যাচারে ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় হিন্দুরা।
পশ্চিমবঙ্গের মূর্শিদাবাদ, মালদা প্রভৃতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে ২০১১ সালের পর বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি । অভিজ্ঞ মহলের আশঙ্কা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের জেলার গ্রামগুলি জনসংখ্যার অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটে গেছে । ফলে অবিলম্বে সিএএ, এনআরসি লাগু করার দাবি উঠছে । দাবি উঠছে জনগননার । যদিও সিএএ, এনআরসি তো দূরের কথা ধর্মের অজুহাত দেখিয়ে কথিত সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলি জনগননা পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ । যার ফলে জাতীয় সুরক্ষা আজ প্রশ্নচিহ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে ।।