একদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,১৭ সেপ্টেম্বর : ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন প্রদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারী আশ্রয় নিয়েছিল বাংলাদেশে । বাংলাদেশের বৃহত্তর অংশের মানুষ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিল তখন । কিন্তু সেই রোহিঙ্গারাই এখন বাংলাদেশের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে গেছে । কারন রোহিঙ্গাদের অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়া যেমন প্রশাসনের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুত হারে বংশবৃদ্ধির কারনে প্রবল চাপের মুখে পড়ছে দেশের অর্থনীতি । ফলে রোহিঙ্গাদের এখন স্বদেশে ফেরাতে পারলে বাঁচে বাংলাদেশ । বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর জন্য তারা নিজে যেমন চেষ্টা চালাচ্ছে তেমনি এনিয়ে সাহায্যের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদনও জানিয়েছে ।
অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্য মিলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে বলে অসমর্থিত সুত্র থেকে জানা গেছে । ভারতের রোহিঙ্গা মুসলিমরা জীবিকার সন্ধানে কোথাও কোথাও হিন্দু সাধু সেজে ভিক্ষা করছে অথবা অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠছে । এখন প্রশ্ন কি হবে বাংলাদেশ ও ভারতের রোহিঙ্গাদের পরিণতি ? তাদের কি আদপেই স্বদেশে পাঠানো সহজ হবে, নাকি চীরস্থায়ী বোঝা বইতে হবে এই দুই রাষ্ট্রকে ?
এদিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আওয়াজ জোরদার হতেই হঠাৎ করে মিয়ানমারে অভ্যন্তরে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে । মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মির’ তুমুল গোলাগুলি চলছে । শুক্রবার সন্ধ্যাতেও গোলাগুলি চলেছিল । শুক্রবার রাখাইন রাজ্যের পাহাড় থেকে ছোড়া একটি মর্টার শেল এসে বাংলাদেশ-মিয়নমার তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্যরেখায় পড়ে । আর তার ফলে মৃত্যু হয় এক রোহিঙ্গা কিশোরের । আহত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ।
কিন্তু মিয়ানমারের সাম্প্রতিক অস্থিরতাকে ‘পরিকল্পিত’ বলে মনে করছেন অনেকেই । তাঁদের মতে রোহিঙ্গাদের যাতে ফেরত নিতে না হয় তার জন্য আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধের নাটক করছে মিয়ানমার সরকার । আর এমনই আভাষ পাওয়া গেল বাংলাদেশের বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের গলাতেও । শনিবার দুপুরে ঢাকার ধানমন্ডিতে আহসানিয়া মিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন,’মিয়ানমার কোনো সময়ই কথা দিয়ে কথা রাখে না । আমরা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়—সব চেষ্টাই করে যাচ্ছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমরা চাই, ১২ লাখ রোহিঙ্গা এখানে আশ্রয় নিয়েছে, শান্তিপূর্ণভাবে তারা যেন স্বদেশে ফিরে যায়, সেই চেষ্টা আমরা করছি।’
তিনি আরও বলেন,’সম্প্রতি আমরা দেখছি মিয়ানমারে শুধু রোহিঙ্গা নয়, তাদের অনেক জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ চলছে । থাইল্যান্ড, চীন, মিজোরাম এবং আমাদের সীমানা ধরে যুদ্ধ চলছে। আমরা লক্ষ করছি, আরাকান আর্মি নামে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী সেখানে যুদ্ধ করছে। তাদের সঙ্গে কখনো দেখি ভালো ভাব, কখনো দেখি যুদ্ধ। ভেতরে কী রহস্য, সেটা তারাই ভালো জানে ।’
কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরাতে এত অনাগ্রহ কেন মিয়ানমারের ? ইতিহাসবিদদরা জানিয়েছেন, মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকানিরা লড়াই করলেও দুই পক্ষের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে। তা হলো- দুই পক্ষের কেউই রোহিঙ্গাদের তাদের দেশের নাগরিক বলে মনে করে না । মূলত আরাকানি বৌদ্ধরাই রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চরম ক্ষুব্ধ । ২০১২ সালের দাঙ্গা সৃষ্টি করেছিল তারাই । রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারের নাগরিক অধিকার না পেতে পারে, সে জন্য তারা জোরালো আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাদের দাবি, রোহিঙ্গারা আদপেই মিয়ানমারের নাগরিক নয়, তারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী। তাদের হাতেই রোহিঙ্গা মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে । আর রোহিঙ্গা মুসলিমদের মেনে না নেওয়ার পিছনে ঐতিহাসিক কারনও আছে ।
তাঁরা জানান,আরাকান আর্মি হল জাতীয়তাবাদী একটি সংগঠন । বর্তমানের রাখাইন রাজ্যটির একসময়ের নাম ছিল আরাকান। থেরোবাদী বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ওই সম্প্রদায়ের মানুষের দখলে ছিল গোটা আরাকান প্রদেশটি । কিন্তু সুলতানি আমল ও পরে ব্রিটিশ শাসনের সময়ে ওই এলাকার ডেমোগ্রাফির আমূল পরিবর্তন ঘটে যায় । আস্তে আস্তে সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে আরাকানরা । যার ফলে আরাকানরা চায় না রোহিঙ্গা ফের ফিরে আসুক রাইখান প্রদেশে । তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিন জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য তাঁরা প্রয়োজনে জাতিসংঘেরও দ্বারস্থ হবেন ।।