এইদিন ওয়েবডেস্ক,ডেট্রয়েট,১৬ সেপ্টেম্বর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট শহরের একজন মহিলা চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ৯ কিশোরীকে খৎনা (female genital mutilation) করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে । ৬ থেকে ৮ বছর বয়সের ওই কিশোরীদের মধ্যে ৪ জন মিশিগানের, ২ জন মিনেসোটা এবং ৩ জন ইলিনয়ের বাসিন্দা । ডেট্রয়েট শহরের লিভোনিয়া ক্লিনিকে (Livonia clinic) এনে তাদের এফজিএম করেছিলেন ডঃ জুমানা নগরওয়ালা(Dr. Jumana Nagarwala) নামে ওই চিকিৎসক । খতনার সময় কিশোরীরা যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলে ক্লিনিকের মালিক ডঃ ফখরুদ্দিন আত্তার (Dr. Fakhruddin Attar) এবং তার স্ত্রী ফরিদা আত্তার তাদের হাত-পা টিপে ধরে থাকতো বলে অভিযোগ ।
ফেডারেল প্রসিকিউটরদের মতে,ডাঃ জুমানা নাগারওয়ালা ডাক্তারদের একটি দলের অংশ যারা এই ধরনের জঘন্য কাজ করার জন্য সারা দেশে ভ্রমণ করে বেড়ায় । নাগারওয়ালা ভারতীয় সম্প্রদায়ের ডাক্তারদের একটি গোপন নেটওয়ার্কের অংশ ছিলেন । যে নেটওয়ার্কটি ধর্ম ও ঐতিহ্যের নামে এই ধরনের ঘৃণ্য কাজমর্ম করে বেড়ায় ।
প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন,ডঃ জুমানা নগরওয়ালা দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ছয় থেকে আট বছর বয়সী মেয়েদেরকে খৎনা করছেন । এযাবৎ ১০০ অধিক মেয়েকে তিনি খৎনা করছেন বলে জানা গেছে ।
ভারপ্রাপ্ত মার্কিন অ্যাটর্নি ড্যানিয়েল লেমিশ বলেছেন,’মেয়েদের যৌনাঙ্গ বিচ্ছেদ নারী ও মেয়েদের উপর হিংস্রতার একটি বিশেষ রূপ । এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গুরুতর ফেডারেল অপরাধ ৷ আধুনিক সমাজে এই অভ্যাসটির কোন স্থান নেই । যারা নাবালিকদের এফজিএম করে তাদের ফেডারেল আইনের অধীনে জবাবদিহি করা হবে ।’
প্রসঙ্গত,১৯৯৬ সাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফজিএম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে । তা সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফজিএম-এর প্রথম নথিভুক্ত ঘটনাটি ছিল ২০০৬ সালে । যখন একজন ইথিওপিয়ান অভিবাসীর তার দুই বছরের মেয়ের যৌনাঙ্গ কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হয় । পরে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার দায়ে অভিযুক্ত হয় চিকিৎসককে । ২০১৮ সালের নভেম্বরে একটি ফেডারেল বিচারক ডক্টর জুমানা নগরওয়ালাকে দোষী সব্যস্ত করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন । কিন্তু এই প্রথা নিষিদ্ধ করার আইনটি অসাংবিধানিক ছিল, এই যুক্তিতে তাঁকে মুক্ত করে দেওয়া হয় ।
কিন্তু চলতি বছরের মার্চের একটি নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১) নাগারওয়ালাকে ডেট্রয়েটের একটি ফেডারেল আদালতে হাজির করানো হলে তাঁকে এফবিআই এর হেফাজতে পাঠানো হয় । দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে ।
২০১২ সালে মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলেছিল যে দেশে ৫ লক্ষেরও বেশি মহিলা এবং মেয়েরা হয় এফজিএমের শিকার হয়েছে নচেৎ এর ঝুঁকিতে রয়েছে । বিশ্বজুড়ে প্রায় ২০ লক্ষ মেয়ে এবং মহিলা এফজিএমের যন্ত্রণা ভোগ করেছে । জাতিসংঘের রিপোর্টে অনুযায়ী,আর তার অর্ধেক মিশর, ইথিওপিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দা । যদিও বর্তমানে ৩০ টির বেশি দেশে খতনা প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়েছে । খৎনার শিকার সমাজকর্মী মারিয়া তাহের এই প্রথাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন, লিঙ্গ সহিংসতা এবং সাংস্কৃতিক সহিংসতা বলে অভিহিত করেছেন ।।