প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,৩১ আগষ্ট : পঞ্চায়েত ভোটের এখনও ঢের দেরি । তার আগেই আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট সহ সমস্ত ভোট বয়কটের ডাক দিলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার গুড়েঘর সহ সংলগ্ন চারটি গ্রামের বাসিন্দারা।এই সংক্রান্ত পোস্টার ব্যানারও গ্রাম গুলির আনাচে কানাচে ঝুলিয়ে দিয়েছেন বাসিন্দারা।ভয়েস বার্তায়ও চলছে ভোট বয়কটের প্রচার।দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার রাস্তাঘাটের কোন উন্নতি না হওয়াতেই ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।অনুন্নয়নের প্রতিবাদে গ্রামের বাসিন্দারি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যথেষ্টই অশ্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা।বিরোধীরা যদিও এমন ঘটনার জন্য রাজ্যে শাসক দলকেই বিঁধেছে।
জামালপুরের ব্লকের জাড়গ্রাম ও চকদিঘী পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম ডুমো,গুড়েঘর,বসন্তবাটি, বিষ্ণুবাটি ও মানশ্রী । সবমিলিয়ে এই গ্রামগুলির জনসংখ্যা প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি হবে। গ্রাম গুলির একটা বড় অংশের মানুষ কৃষিজীবী । তবে শিক্ষিত চাকুরিজীবী মানুষজনও এই গ্রামে খুব একটা কম নেই । গ্রামের বাসিন্দা শেখ মনতাজ আলী,উত্তম ঘোষ ও সুব্রত পাল মঙ্গলবার বলেন , ‘ভোট আসলেই রাজনৈতিক দলের নেতারা ও প্রার্থীরা তাঁদের গ্রামে আসেন। গ্রামে এসে এলাকার রাস্তাঘাট সহ সর্বক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধনে কাজ করবেন বলে তারা গালভরা প্রতিশ্রুতিও দিয়ে যান।কিন্তু ভোট মিটে গেলেই নেতা ও প্রার্থীরা সব প্রতিশ্রুতির কথাই ভুলে যান ।তাদের আর দেখাই পাওয়া যায় না। অনুন্নয়নের কারণে বছরের পর বছর ধরে দুর্দশা ভোগ করেই গুড়েঘর সহ সংলগ্ন চারটি গ্রামের বাসিন্দাদের জীবন কাটাতে হয়।তাই
বিতশ্রদ্ধ হয়েই আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট সহ সমস্ত ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ।’
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন,তাঁদের এলাকার বিষ্ণুবাটী পোস্ট অফিস হয়ে পৌছানো যায় হুগলী জেলার সীমান্তবর্তী ডুমো এলাকায় । সেখান থেকে গুড়েঘর চড়কতলা থেকে মহিষগড়িয়া পর্যন্ত ৫ কিমি রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবৎ বেহাল হয়ে রয়েছে । ভগ্নদশার কারণে ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাতায়াত করাও দায় হয়ে উঠেছে ।কোন অ্যাম্বুলেন্সে মুমুর্ষ রোগীকে নিয়ে ওই রাস্তা দিয়ে যেতে পারে না ।অনেক ঘুর পথে রোগীকে নিয়ে যেতে হয় । বেহাল রাস্তার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে বলে গ্রামের ছাত্র ছাত্রীরা স্কুলে যেতে চায় না।এলাকার চাষিদের গুড়েঘর- মাধবপুর সমবায় সমিতি থেকে চাষের সার আনতে যেতে অসুবিধার সন্মুখীন হতে হয়।বেহাল রাস্তার জন্য ডাক পরিষেবা যথাযথ পাওয়া থেকেও গ্রামবাসীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি বেহাল রাস্তার জন্য হকাররা গ্রামে খবর কাগজ পর্যন্ত দিতেও আসেন না ।’
উত্তম ঘোষ ও সুব্রত পালরা বলেন,’বেহাল রাস্তাটি সংস্কার করে পিচ রাস্তা করে দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীরা বহুবার ব্লক প্রশাসন, বিধায়ক ও জেলাপরিষদ সভাধিপতিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন । এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও লিখিত আবেদন জানানো হয়েছে । কিন্তু আজ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’সেই কারণেই প্রশাসন ও সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে জাড়গ্রাম পঞ্চায়েতের ডুমো,গুড়েঘর,বসন্তবাটী এবং চকদিঘী পঞ্চায়েতের বিষ্ণুবাটি ও মানশ্রী গ্রামের বাসিন্দারা ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে উত্তম ঘোষ জানান। তবে শুধু ভোট বয়কট সংক্রান্ত পোস্টার ও ব্যানার গ্রামে ঝুলিয়েই খান্ত হননি গ্রামবাসীরা । তাঁরা ভোট বয়কট সংক্রান্ত ভয়েস বার্তা তৈরি করে গ্রামবাসীদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে নম্বরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন ।
এই বিষয়ে বিডিও ( জামালপুর ) শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,ঃওই এলাকার রাস্তা যে বেহাল হয়ে রয়েছে সেটা স্বীকার করতেই হবে। রাস্তাটির সংস্কারে জন্য আমরা প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি । তবে এই বিষয়টি নিয়ে যে গুড়েঘর ও তার সংলগ্ন চার পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা পঞ্চায়েত ভোট সহ সমস্ত ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছেন সেই বিষয়টি আমার জানা নেই।’ গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে বিডিও জানিয়েছেন । অন্যদিকে জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক অলোক মাঝি সব শুনে বলেন,’রাস্তাটি বেহাল অবস্থা থাকার কথা আমিও জেনেছি। তবে গ্রামবাসীরা যে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা জানা ছিল না । রাস্তাটির সংস্কার কাজ যাতে দ্রুত শুরু করা যায় সেই ব্যাপারে আমি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি ।’ তবে এই বিষয়ে এলাকার জন প্রতিনিধিদেরও উদ্যোগী হওয়া উচিৎ ছিল বলে বিধায়ক মন্তব্য করেছেন ।
এদিকে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে গ্রামবাসীদের
ভোট বয়কটে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কথা জানার পরেই কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতৃত্ব। জামালপুর নিবাসী জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন,’মিটিং মিছিলে তৃণমূলের নেতা,মন্ত্রী ও বিধায়করা সবসময় দাবি করেন রাজ্য জুড়ে নাকি উন্নয়নের জোয়ার বইছে । বীরভূম জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আবার আরে এক ধাপ এগিয়ে বলেন উন্নয়ন রাস্তায় দাড়িয়ে আছে ।’রামকৃষ্ণবাবু দাবি করেন,’তৃণমূলের নেতাদের এইসব দাবি যে আসলে ’ধাপ্পা’ সেটা জামালপুরের দুটি পঞ্চায়েত এলাকার পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দাদের ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকেই পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে ।’।