এইদিন ওয়েবডেস্ক,৩০ আগস্ট : ব্রাজিলের একটি আদিবাসী সম্প্রদায়ের সর্বশেষ জীবিত ব্যক্তির মৃত্যু হল । তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ বলা হত । কারন ১৯৯৫ সালে তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল চোরা শিকারি ও অবৈধ খনি শ্রমিকরা । তারপর দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর তিনি জঙ্গলের মধ্যে একা কাটিয়ে দিয়েছেন । গত ২৩ আগস্ট বলিভিয়ার সীমান্তে রন্ডোনিয়া রাজ্যের তানারু আদিবাসী অঞ্চলের একটি কুঁড়েঘরের কাছ থেকে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয় । আশপাশে সন্দেহজনক কিছু দেখা যায়নি । তাই মনে করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবেই মারা গেছেন তিনি । তবুও তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে ময়না তদন্ত করা হবে ।ব্রাজিলের ন্যাশনাল ইন্ডিয়ান ফাউন্ডেশন (FUNAI) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, লোকটির বয়স আনুমানিক ৬০ বছর । তাঁর আসল নাম কখনও জনসমক্ষে আসেনি ।
ব্রাজিলের সংবিধান অনুযায়ী আদিবাসীরা তাদের পূর্বপুরুষের অঞ্চলের মালিক হয়ে থাকেন। ফলে কেউ যদি এসব অঞ্চল দখল করতে চায় তাহলে সেসব আদিবাসীদের হত্যা করা হয় । সম্ভবত সেই কারনেই ‘গর্ত মানব’-এর গোষ্ঠীর লোকজনদের নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছে ।
এই ব্যক্তিকে ‘ম্যান অব হোল’ বা গর্তমানব বলা হত কারণ তিনি জঙ্গল জুড়ে গর্ত খুঁড়তেন । বন্য প্রাণী ধরার জন্য বা নিজে লুকিয়ে থাকার জন্য এসব গর্ত খুঁড়তেন বলে মনে করা হয় । বলিভিয়ার সীমান্তের কাছে অবস্থিত রন্ডোনিয়া রাজ্যের তানারু আদিবাসী বসবাস ছিল তার। ১৯৯৫ সালে তার পরিবারের সাতজন সদস্যের মধ্যে ছয়জনকেই হত্যা করা হয়। এরপর পুরোপুরি একাকি হয়ে যান তিনি । এর আগে ১৯৭০ সালে তার সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যদেরও নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । তিনিই ছিলেন ওই সম্প্রদায়ের একমাত্র জীবিত সদস্য । তাই তাঁকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গ মানুষ বলা হত ।
একটি সম্প্রদায়েত একমাত্র জীবিত সদস্য হওয়ায় তাঁর নিরাপত্তার জন্য সর্বদা নজর রাখতো ব্রাজিলের আদিবাসী সংস্থা । ২০১৮ সালে ব্রাজিলের আদিবাসী সংস্থা তার একটি ছবি তুলতে সমর্থ হয়। আর এতে ক্ষিপ্ত হন গর্ত মানব । তারপর তিনি গভীর জঙ্গলে চলে যাওয়ায় আর দেখা মেলেনি । শেষে দিন সাতেক আগে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার হয় ।
ব্রাজিলে এখনো ২৪০টি আদিবাসী সম্প্রদায় আছে। কিন্তু খনি শ্রমিক, কৃষকসহ অন্যন্যরা তাদের অঞ্চল দখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । আর এই কারণে এসব সম্প্রদায়ের মানুষদের জীবন সব সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে ।।