দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৮ আগস্ট : ‘পাঁচন’,’চড়াম চড়াম ঢাক’ বা ‘গুড় বাতাসা’ বিলির নিদান আদপে বিরোধীদের চমকানোর জন্য অনুব্রত মণ্ডলের একটা ‘টেকনিক’ । যা দীর্ঘদিনের অধ্যাবসায়ে রপ্ত করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রিয় ভাই’ ‘কেষ্ট’কে । আর যে টেকনিকের জোরে অনুব্রত মণ্ডল এতদিন বীরভূম জেলা ছাড়াও পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রাম, মঙ্গলকোট, কেতুগ্রামের দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন । বিস্তীর্ণ এই এলাকায় তিনিই ছিলেন দলের সর্বেসর্বা । দলের খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে ভোটের মাস্টার প্লান তৈরি সব একা হাতে সামলাতেন অনুব্রত । কিন্তু গরু পাচার মামলায় অনুব্রত এখন জেলে । এদিকে পঞ্চায়েত ভোট সামনে । অনুব্রতর সমকক্ষ নেতাও নেই যে দলের হাল ধরবে । ফলে কে পার করাবে ভোটের বৈতরণী ? এখন থেকেই এনিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে অনুব্রতহীন তৃণমূল নেতৃত্ব । রবিবার পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের কৈচরে একটি লজে আয়োজিত তৃণমূল কংগ্রেসের আলোচনা সভায় বক্তাদের গলায় বারে বারে উঠে এল অনুব্রত মণ্ডলের অভাবের কথা ।
সভায় বক্তব্য রাখার সময় বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘সিপিএমের জমানায় মঙ্গলকোটের সাধারণ মানুষের পাশে থেকে যে মানুষটা সাহস জুগিয়ে গিয়েছিলেন, যে মানুষটার নেতৃত্বে এতদিন আমরা লড়াই করে এসেছি সেই মানুষটাকে ছাড়া মঙ্গলকোটে মিটিং করতে এসে মনটা ভারাক্রান্ত লাগছে ।’ এরপর তিনি বলেন, ‘অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বেই আগামীদিনে আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচন ও লোকসভা নির্বাচনে লড়ব ।’ মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরীর গলাতেও ছিল অনুব্রত মণ্ডলের অনুপস্থিতি জনিত বিষাদের সুর । অবশ্য তিনি জানিয়ে দেন, ‘অনুব্রত মণ্ডল একদিন ছাড়া পাবেনই। তাকে আটকে রাখতে কেউ পারবে না ।’ অর্থাৎ অনুব্রত মণ্ডলকে ছাড়া বীরভূম জেলা ও পূর্ব বর্ধমান জেলার একাংশের তৃণমূল কংগ্রেস যে কতটা অসহায় তা এদিন নেতাদের বক্তব্য থেকে তা স্পষ্ট অনুভব করা গেল । তাই সংগঠনের হাল ধরতে বা আগামী ভোটের বৈতরণী পার করাতে অনুব্রত মণ্ডলের জেল থেকে বের হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছেন বীরভূম ও বর্ধমান জেলার তৃণমূলের নেতারা ।
এদিন কৈচরের লজে ওই আলোচনাসভায় অধিকাংশই বীরভূম জেলার দলীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা,বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়, বোলপুরের সাংসদ অসিত মাল, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিংহ, পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী ।।