প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৪ আগষ্ট : আসানসোলের সিবিআই আদালতের বিচারকে হুমকি চিঠি পাঠানোর ঘটনা এবার চাঞ্চল্যকর মোড় নিল । মঙ্গলবার বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন ,অনুব্রত মণ্ডল জামিন না পেলে সিবিআই আদালতের বিচারকে মাদক মামলাতে ফাঁসানো হবে এমন হুমকি চিঠিতে থাকা সই ও সিলমোহর তাঁর নয় । এরপর বিচারককে পাঠানো হুমকি চিঠির বিষয়টি নিয়ে বুধবার বর্ধমান আদালতের এক আইনজীবীর প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করলো বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশন ।
এদিন পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক প্রিয়াংকা সিংলার ডাকা বৈঠকে যোগ দিয়েও সেই সন্দেহ ও ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরেন বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনে প্রতিনিধিরা । পাশাপাশি এদিনই হুমকি চিঠির ঘটনার তদন্তে আসানসোল পুলিশের একটি দল বর্ধমানে এসে বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার পরেই হেড ক্লার্ক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় চিঠি লিখে রাজ্য সরকারী কর্মচারী ফেভারেশনকে অভিযোগে জানান,’বর্ধমান আদালতের এক আইনজীবী সহ তিনজন ওই রকম চিঠি বিচারককে পাঠিয়ে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে ।’ এই পরিস্থিতিতে বিচারককে হুমকি চিঠি পাঠানোর ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দেষীকে খুঁজে বার করাটাই এখন পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
বর্ধমানের শাখারীপুকুর এলাকার সরকারী আবাসনে থাকেন বর্ধমান আদালতের আপার ডিভিশন ক্লার্ক বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় । হুমকি চিঠির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এদিন বেলা ১১টা নাগাদ আসানসোল কমিশনারেট পুলিশের একটি দল তাঁর কাছে পৌছায়। দু’জন পুলিশ অফিসার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে বাপ্পা বাবু জানিয়েছেন। বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় কে পুলিশি তদন্তের মুখোমুখি হতে হওয়ার পরেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন লিখিত অভিযোগে পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসককে জানান,“বাপ্পার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে’। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দোষীর শাস্তির দাবী জানান রাজ্য সরকারি কর্মচারী সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি সভাপতি বিশ্বজিৎ সাঁই।এদিই বিকালে বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলার সঙ্গে দেখা করেন।এক আইনজীবী-সহ তিনজন কেন ওইরকম হুমকি চিঠি একজন বিচারকের কাছে পাঠিয়ে বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়কে ফাঁসানোর’ চেষ্টা করছে তাও জেলাশাসকের কাছে মৌখিক ভাবে ব্যক্ষ্যা করেন বার এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা। এর পর মহকুমাশাসক (বর্ধমান সদর) তীর্থঙ্কর বিশ্বাস ও জেলাশাসক ফের পৃথকভাবে বর্ধমান আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠকও করেন।
তৃণমূল প্রভাবিত সরকারী কর্মচারী সংগঠন সূত্রে খবর বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় ভীত ও সন্ত্রস্ত’ হয়ে রয়েছেন। এমন ঘটনার জন্য সে বর্ধমান আদালতের একজন মুহুরি, টাইপিস্ট ও আইনজীবীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে । তাঁর অভিযোগ,বেআইনিভাবে হলফনামা বের করতে চেয়ে বাধা পেয়েই ওই তিনজন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এইসব
কাণ্ড ঘটিয়েছে । এদিন জেলাশাসকের দফতরের সামনে দাঁড়িয়েও একই নালিশ করেন বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় । পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ সাঁইও দাবি করেন, “আমাদের কাছে কিছু সন্দেহজনক নাম রয়েছে। প্রশাসনকে সব বলেছি। আমরা চাই, ওই উড়ো বা ভুয়ো চিঠির সঠিক তদন্ত হোক । জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা সেই দাবি রেখেছি ।’
বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা বলেন, “উড়ো বা ভুয়ো চিঠির পিছনে একজন আইনজীবী জড়িত থাকতে পারেন সন্দেহ করা হচ্ছে। সে জন্যে আমরা জেলাশাসকের কাছে গিয়েছিলাম। প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেবে, আমাদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে। ওই আইনজীবী আদালত চত্বরেও বসেন না।“ প্রতিনিধি দলে থাকা অপর আইনজীবী অরূপ দাস বলেন, “যাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি , অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকার জন্য ২০১৪ সাল থেকে তার সঙ্গে বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন সম্পর্ক ত্যাগ করেছে। বার এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জেলাশাসককে জানানো হয়েছে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা হোক। ওই ব্যক্তি দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক প্রশাসন ।।