প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২২ আগষ্ট : কলেজ ছাত্রকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত মোস্তাক মির্জা ও তাঁর স্ত্রী তুহিনা মির্জাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে । তার পরেও কমেনি ক্ষোভের আঁচ ।ময়নাতদন্ত শেষে নিহত কলেজ ছাত্র সুরজ মল্লিকের মৃতদেহ সোমবার বিকালে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বোকড়ার বিদ্যানিদি গ্রামে ফিরতেই ফের উত্তাল হল গোটা গ্রাম।দাবি উঠলো খুনি ও খুনিদের মদতদাতা ভিলেজ পুলিশের ফাঁসি সাজার । দাবির বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসন সুনিশ্চিৎ না করা পর্যন্ত মৃতদেহ কবর দিতে অস্বীকার করে মৃতর পরিবার ও গ্রামবাসীরা । পুলিশ অনেক বোঝালেও মৃতের পরিবার ও গ্রামবাসীরা দাবির বিষয়টি নিয়ে অনড় মনোভাব দেখিয়ে চলেন।পরে মৃত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে অভিযুক্তদের পরিবার আলোচনায় বসে দাবির বিষয়টি মেনে নিলে ক্ষোভ বিক্ষোভ প্রশমিত হয়।স্বস্তি পান পুলিশ আধিকারিকরা ।
বছর ২০ বয়সী কলেজ ছাত্র সুরজ মল্লিকের বাড়ি রায়না থানার বোকড়ার বিদ্যানিদি গ্রামে। সে রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজে বিএ দ্বিতীয় বর্ষে পাঠরত ছিল।কলেজ ছাত্র সুরজ মল্লিকের বাবা নজরুল মল্লিক এদিন বলেন তাঁর ছেলে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল । তা নিয়ে ঈর্ষান্বিত ছিল প্রতিবেশী মোস্তাক মির্জা ও তাঁর স্ত্রী তুহিনা মির্জা । তারা পরিকল্পনা করে গত ১৬ আগষ্ট রাতে ইলেকট্রিক লাইন মেরামত করে দেওয়ার কথা বলে সুরজকে তাদের বাড়িতে ডেকে নেয় । তার পর সুরজকে ঘরে আটকে রেখে হাত পা বেঁধে নির্মম ভাবে মারধোর করে।জখম অবস্থায় সুরজ জল চাইলে অভিযুক্তরা সুরজের মুখে ফিনাইল ঢেলে দেয় । সুরজ অচৈতন্য হয়ে পড়লো অভিযুক্তরা সুরজ কে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যায় ।সুরজের মা প্রভাআসরফ বেগম বলেন , পরদিন সকালে তিনি গ্রামের কলতলায় তাঁর ছেলেকে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন । ছেলেকে প্রথম রায়না হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিন্তু ছেলেকে প্রাণে বাঁচানো যায়নি।
এদিকে সুরজের মৃত্যুর খবর রবিবার দুপুরে গ্রামে পৌছাতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিদ্যানিদি গ্রাম । মৃতের পরিবার ও প্রতিবেশীরা গ্রামের ভিলেজ পুলিশ সহ অভিযুক্ত প্রতিবেশী দম্পতিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্বোচ্চার হয় । গ্রামবাসীরা শ্যামসুন্দর- জামালপুর সড়ক পথ অবরোধ করেও বিক্ষোভ দেখায়। খবর পেয়ে এসডিপিও( বর্ধমান দক্ষিণ )এর নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌছে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে । এদিন ময়নাতদন্ত শেষে কড়া পুলিশ পাহারায় ছাত্রের মৃতদেহ গ্রামে ফের ।ছাত্রের মৃতদেহ গ্রামে ফিরতে ফের এদিনও একই ভাবে গোটা বিদ্যানিদি গ্রামের মানুষজন অভিযুক্তদের ফাঁসির সাজা ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে স্বোচ্চার হন । ওই রাতেই পুলিশ অভিযুক্ত মোস্তাক মির্জা ও তাঁর স্ত্রী তুহিনা মির্জাকে গ্রেপ্তার করে ।খুনের ধারার মামলা রুজু করে পুলিশ সোমবার অভিযুক্ত দম্পতিকে বর্ধমান আদালতে পেশ করে তদন্তের প্রয়োজনে ১২ দিনের পুলিশি হেপাজতে নিয়েছে ।
মৃত ছাত্রের পিসতুতো দাদা সেখ মিন্টু এদিন বলেন , পিটিয়ে সুরজকে জখম করার কথা ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ১৭ আগষ্ট সকালে তারা রায়না থানায় জানাতে গিয়েছিলেন । কিন্তু থানার অফিসার অভিযোগ না নিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে দেয় । এরপর রবিবার বেলায় বর্ধমান হাসপাতালে সুরজ মারা যাবার পর বর্ধমান থানা স্বতপ্রণোদিত ভাবে রায়না থানার ওসিকে ফোন করে ঘটনার কথা জানায়, কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চায় । তারপর রায়না থানা আমাদের অভিযোগ নেয় । পরে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে ।
এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী জানিয়েছেন,
অভিযুক্ত দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশি হেপাজতে নেওয়া হয়েছে। যুবককে খুনের ঘটনায় মোটিভ কি ছিল,ঘটনায় আর কেউ যুক্ত ছিল কিনা তা জানার জন্য ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । গ্রামে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক বলে এসডিপিও জানিয়েছেন ।।