চিত্তশুদ্ধি না হ’লে হয় না। কামিনী-কাঞ্চনে মন মলিন হয়ে আছে, মনে ময়লা পড়ে আছে। ছুৃঁচ কাদা দিয়ে ঢাকা থাকলে চুম্বকে আর টানে না । মাটি কাদা ধুয়ে ফেললে তখন চুম্বকে টানে । মনের ময়লা তেমনি
চোখের জলে ধুয়ে ফেলা যায় । ‘হে ঈশ্বর আর অমন কাজ করবো না’ বলে যদি কেউ অনুতাপে কাঁদে, তা’হলে ময়লাটা ধুয়ে যায়। তখন ঈশ্বররপে চুম্বক
পাথর মনরূপে ছুঁচকে টেনে লয় । তখন সমাধি হয়, ঈশ্বর দর্শন হয়।
কিন্তু হাজার চেষ্টা কর তাঁর কৃপা না হলে কিছু হয় না। তাঁর কৃপা না হলে তাঁর দর্শন হয় না। কৃপা কি সহজে হয় ? অহংকার একেবারে ত্যাগ
করতে হবে। ‘আমি কর্তা’ এ বোধ থাকলে ঈশ্বর দর্শন হয় না । ভাঁড়ারে একজন আছে, তখন বাড়ীর কর্তাকে যদি কেউ বলে মহাশয় আপনি এসে জিনিস
বার ক’রে দিন। তখন কর্তাটি বলে, ভাঁড়ারে একজন রয়েছে আমি আর গিয়ে কি ক’রবো । যে নিজে কর্তা হ’য়ে বসেছে তার হৃদয়মধ্যে ঈশ্বর সহজে আসেন
না। কৃপা হলেই দর্শন হয়। তিনি জ্ঞানসূর্য। তাঁর একটি কিরণে এই জগতে জ্ঞানের আলো পড়েছে, তবেই আমরা পরস্পরকে জানতে পারছি, আর জগতের কত রকম বিদ্যা উপার্জন করছি। তাঁর আলো যদি একবার তিনি নিজে তাঁর মুখের উপর ধরেন, তাহ’লে দর্শন লাভ হয়। সার্জন সাহেব রাত্রে আঁধারে লণ্ঠন হাতে ক’রে বেড়ায় ; তাঁর মুখে কেউ দেখতে পায় না। কিন্তু ঐ আলোতে সে সকলের মুখ দেখতে পায়। আর সকলে পরস্পরের মুখ দেখতে পায় ।
যদি কেউ সার্জনকে দেখতে চায়, তা হলে তাকে প্রার্থনা ক’রতে হয় । বলতে হয় — সাহেব কৃপা ক’রে একবার আলোটি নিজের মুখের উপর ফিরাও, তোমাকে একবার দেখি।
ঈশ্বরকে প্রার্থনা করতে হয়, ঠাকুর কৃপা ক’রে জ্ঞানের আলো তোমার নিজের উপর একবার ধর, আমি তোমায় দর্শন করি !
ঘরে যদি আলো না জলে, সেটি দারিদ্র্যের চিহ্ন। তাই হৃদয়মধ্যে জ্ঞানের আলো জ্বালতে হয়। ‘জ্ঞানদীপ জ্বেলে ঘরে, ব্রহ্মময়ীর মুখে দেখ না।’
কথামৃত – ১/৪/৭