প্রশ্ন : জীব, ঈশ্বর ও ব্রহ্মে পার্থক্য কি ?
স্বামী বিবেকানন্দ : জীব হচ্ছে ব্যষ্টি, আর সকল জীবের সমষ্টি হচ্ছেন ঈশ্বর । জীবের অবিদ্যা প্রবল, ঈশ্বর বিদ্যা ও অবিদ্যার সমষ্টি মায়াকে বশীভূত করে রয়েছেন এবং স্বাধীনভাবে এই স্থাবরজঙ্গমাত্মক জগৎটা নিজের ভেতর থেকে project (বাহির) করেছেন। ব্রহ্ম কিন্তু ঐ ব্যষ্টি-সমষ্টির অথবা জীব ও ঈশ্বরের পারে বর্তমান। ব্রহ্মের অংশাংশ ভাগ হয় না। বোঝাবার জন্য তাঁর ত্রিপাদ,চতুষ্পাদ ইত্যাদি কল্পনা করা হয়েছে মাত্র। যে পাদে সৃষ্টি-স্থিতি-লয় অধ্যাস
হচ্ছে, সেই ভাগকেই শাস্ত্র ‘ঈশ্বর’ বলে নির্দেশ করেছে । অপর ত্রিপাদ কূটস্থ, যাতে কোনরূপ দ্বৈত কল্পনার ভান নেই ; তাই ব্রহ্ম। তা বলে এরূপ যেন মনে করিসনি যে, ব্রহ্ম- জীবজগৎ থেকে একটা স্বতন্ত্র বস্তু।
বিশিষ্টাদ্বৈতবাদীরা বলেন, ব্রহ্মই জীবজগৎরূপে পরিণত হয়েছেন। অদ্বৈতবাদীরা বলেন, তা নয়, ব্রহ্মে এই জীবজগৎ অধ্যস্ত হয়েছে মাত্র ; কিন্তু বস্তুতঃ ওতে ব্রহ্মের কোনরূপ পরিণাম হয়নি । অদ্বৈতবাদী বলেন, নাম-রূপ নিয়েই জগৎ । যতক্ষণ নাম-রূপ আছে, ততক্ষণ জগৎ আছে। ধ্যানধারণা- বলে যখন নাম-রূপের বিলয় হয়ে যায়, তখন এক ব্রহ্মই থাকেন। তখন তোর,আমার বা জীব-জগতের স্বতন্ত্র সত্তার আর অনুভব হয় না। তখন বোধ হয়, আমিই নিত্য-শুদ্ধ-বৃদ্ধ প্রত্যক্ষ- চৈতন্য বা ব্রহ্ম। জীবের স্বরূপই হচ্ছেন ব্রহ্ম ; ধ্যান-ধারণায় নাম-রূপের আবরণটা দূর হয়ে ঐ ভাবটা প্রত্যক্ষ হয় মাত্র ।।
“উদ্বোধন কার্যালয়” কলকাতা কর্তৃক প্রকাশিত “বেদান্ত কি এবং কেন(প্রশ্নোত্তর) স্বামী বিবেকানন্দ” থেকে সংগৃহীত ।