“শাশ্বত ঈশ্বর আছেন এবং শাশ্বত প্রকৃতিও আছে, আর আছে অসংখ্য শাশ্বত আত্মা। ইহাই হইল ধর্মের প্রথম সোপান। ইহাকে বলে ‘দ্বৈতবাদ’ । এই স্তরে মানুষ নিজেকে এবং ঈশ্বরকে অনন্তকাল ধরিয়া পৃথকভাবে দেখে। এই স্তরে ঈশ্বর একটি স্বতন্ত্র সত্তা, মানুষ একটি স্বতন্ত্র সত্তা, এবং প্রকৃতি একটি স্বতন্ত্র সত্তা। ইহাই হইল দ্বৈতবাদ।…
তারপরে আসে আর একটি রূপ,… মানুষ বুঝিতে আরম্ভ করে যে,ঈশ্বর যদি এই বিশ্বের কারণ হন এবং এই বিশ্ব যদি কার্য হয়,তাহা হইলে স্বয়ং ঈশ্বরই তো এই বিশ্ব এবং আত্মাসমূহরূপে প্রকাশিত হইয়াছেন,
এবং মানুষ নিজেও পূর্ণ সত্তা ঈশ্বরের একটি অংশ মাত্র। আমরা ছোট ছোট জীব সেই অগ্নিকুণ্ডের স্ফুলিঙ্গ মাত্র ; সমগ্র বিশ্ব স্বয়ং ঈশ্বরেরই প্রকাশ।
ইহাই পরবর্তী সোপান। সংস্কৃতে ইহাকে বলে ‘বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ’ ।
তারপর আসে একটি আরও সূক্ষ্মতর প্রশ্ন। প্রশ্নটি হইল : অসীমের কি অংশ থাকিতে পারে ? অসীমের অংশ বলিতে কি বোঝায় ? যদি বিচার করিয়া দেখ, বুঝিতে পারিবে—ইহা অসম্ভব। অসীমকে কখনও ভাগ করা যায় না, উহা সর্বদাই অসীম। অসীমকে যদি ভাগ করা যাইত, তাহা হইলে প্রতিটি অংশই অসীম হইত; অথচ দুইটি অসীম কখনও থাকিতে পারে না। ধর যদি থাকিত,তাহা হইলে একটি অপরটিকে সীমাবদ্ধ করিত, এবং উভয়েই সসীম হইয়া যাইত। কাজেই আমাদের সিদ্ধান্ত হইল—অসীম এক,বহু নয়; একই অসীম আত্মা হাজার হাজার দর্পণে নিজেকে প্রতিবিম্বিত করিয়া ভিন্ন ভিন্ন আত্মা-রূপে প্রতিভাত হইতেছে। এই বিশ্বের অধিষ্ঠান স্বরূপ অসীম আত্মাকেই আমরা বলি ‘ঈশ্বর’। মানব মনের অধিষ্ঠান সেই এক অসীম আত্মাকেই আমরা বলি ‘মানবাত্মা’। এটাই অদ্বৈতবাদ।”
“বেদান্ত কি এবং কেন(প্রশ্নোত্তর) স্বামী বিবেকানন্দ” থেকে সংগৃহীত ।