শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),৩০ জুলাই : “আমে দুধে মিশে যাবে / আঁঠি গড়াগড়ি খাবে”- পাকা আম খাওয়ার পর আমের আঁঠির মূল্য কি টলিউডের একটি ছবির এই গানে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে । কিন্তু যদি বলা হয় আমের আঁঠি দিয়েও একটি পরিবারের সংসার চলতে পারে, শুনলে হয়তো বহু মানুষ ভ্রুঁ কোঁচকাবেন । কিন্তু রেল লাইন, সড়ক পথের ধারে বা অলিতে গলিতে ফেলে দেওয়া আমের আঁঠি থেকে গজানো চারা গাছ বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলীর রেলবাজারের বেশ কিছু পরিবার । এক একটি চারা গাছ বিকোচ্ছে ৫০-৮০ পয়সা দরে । আর এই আমের চারা গাছের রীতিমতো একটি পাইকারি বাজার রয়েছে পূর্বস্থলী রেলস্টেশনের ৪ নম্বর প্লাটফর্মের শীতলমন্দিরের কাছে । রোজ সেখানে হাজার হাজার চারা গাছ বিক্রি করতে আসছে এলাকার বহু পুরুষ, মহিলা এমনকি অনেক শিশু ।
আম সকলের প্রিয় ফল । বিভিন্ন জাতের পাকা আম পছন্দ করেন না এমন মানুষ বিরল । বাসে,ট্রেনে সফরের সময়েও পাকা আমে কামড় দিতে দেখা যায় যাত্রীদের । আমের শাঁস গলাদ্ধকরণের পর আঁঠিটি বাস,ট্রেনের জানালা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেয় যাত্রীরা । গৃহস্থরা আমের আঁঠি ছুড়ে ফেলেন বাড়ির আশেপাশে । অনাদরে পড়ে থাকা ওই আঁঠিগুলিই পরে বর্ষার জলে অঙ্কুরিত হয় । আর সেই চারাগাছ গুলিকেই অন্ন সংস্থানের হাতিয়ার করেছে পূর্বস্থলীর রেলবাজার এলাকার বহু পরিবার ।
জানা গেছে,পূর্বস্থলীর রেলবাজারের বাসিন্দা পুরুষ, মহিলা, শিশুসহ ৭০০ থেকে ৮০০ জন মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত । ভোরের আলো ফোটার আগেই তারা আমের আঁঠির সন্ধানে ধাত্রীগ্রাম, জিরাট,খামারগাছি, ব্যান্ডেল, কাটোয়া,দাঁইহাট প্রভৃতি এলাকার ট্রেন লাইন ও সড়ক পথ ধরে ঘুরতে শুরু করেন । দিনভর ঘুরে ঘুরে এক একজন ২০০ থেকে ৪০০ চারাগাছ সংগ্রহ করেন । দুপুর ২টা নাগাদ তারা ট্রেন ধরে ফিরে আসেন পূর্বস্থলীর পাইকারি বাজারে । প্রতি একশ বান্ডিলের চারাগাছ তারা ৫০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেন ।
পাইকারি ব্যবসায়ী সুনীল মণ্ডল বলেন, ‘আমরা ওই চারাগাছগুলি স্থানীয় এলাকার নার্শারিগুলি ছাড়াও হুগলী, উত্তর ২৪ পরগনা, বিহার প্রভৃতি এলাকার নার্শারিতে বিক্রি করে দিই । প্রতি একশ চারা গাছের বান্ডিল বিক্রি হয় ১০০ টাকা দরে ।’
বর্তমানে বর্ষার মরশুম চলছে । বৃষ্টিপাতের জলের ছোঁওয়ায় অঙ্কুরিত হয়ে উঠছে অনাদরে পড়ে থাকা আমের আঁঠিগুলি । আর ওই সমস্ত চারাগাছ সংগ্রহ করে পাইকারি বাজারে বিক্রি করে রোজ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে আয় করছেন পূর্বস্থলীর রেলবাজারের বহু মানুষ । কিন্তু এই আয় সাময়িক । বর্ষার মরশুম চলে গেলে কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে এখন থেকেই দুঃশ্চিন্তায় রয়েছে ওই সমস্ত হতদরিদ্র পরিবারগুলি ।।