এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৮ জুলাই : এসএসসি নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে আষ্টেপৃষ্টে জড়ানো পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অবশেষে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রীমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভার বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে থাকা শিল্প-বাণিজ্য, পরিষদীয়, তথ্যপ্রযুক্তি, শিল্প পুনর্গঠন এই ৪টি দফতর কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় । আপাতত দপ্তরগুলি পরিচালনা করবেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী । এছাড়া দলের মানসম্মান বাঁচাতে মহাসচিবের পদ থেকেও যে সরানো হবে তা দিনের আলোর মত স্পষ্ট । কিন্তু ‘স্বচ্ছ ভাবমূর্তি’ প্রমান করতে যাওয়াটা কি তৃণমূলের কাছে বুমেরাং হবে ? পার্থকে সরিয়ে কি আদপে নিজের বিপদ ডেকে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ? কারন শিক্ষক নিয়োগ দূর্নীতির জাল কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না । প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে আছে এই ‘দুষ্টচক্র’ । এখন ‘অভিমানী’ পার্থ ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ বান্ধবী’ যদি তদন্তকারী দলের কাছে সব খুলে বলেন, তদন্তে সহযোগিতা করে চলেন,তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের কাছে তা যথেষ্ট অস্বস্তির কারন হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল।
প্রসঙ্গত,শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দূর্নীতির অভিযোগ আজকের নয় । ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে । ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে ৩০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল । কম্বাইন্ড মেরিট লিস্টে ছিলেন ৬ হাজার জন। এই ৬ হাজার পরীক্ষার্থীর নিয়োগ চেয়ে কয়েকশো মামলা হয় কলকাতা হাইকোর্টে । যদিও মামলার রায় তখন সরকারের পক্ষেই গিয়েছিল । এরপর ২০১৮ সালে সরকারের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া বা ক্যাগ । তখন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৷ ক্যাগের তরফে তথ্য প্রমাণ পেশ করে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের সহকারি শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে চুড়ান্ত দুর্নীতি হয়েছে ।
যদিও নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসা তৃণমূল সরকার কোনোভাবে পরিস্থিতি ‘ম্যানেজ’ করে ফেলে । কিন্তু রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা এলাকার তৃণমূলের ছোটোখাটো মন্ত্রী, বিধায়ক,মায় ব্লক স্তরের নেতাদের দিকে আজও এই ইস্যুতে আঙুল তোলেন সাধারণ মানুষ । এখন ‘বহিষ্কৃত’ পার্থ চট্টোপাধ্যায় যদি হাটের মাঝে হাঁড়ি ভেঙে দেন তাহলে একদিকে যেমন বহু কর্মরত শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মচারীদের ‘চাকরি নট’ হয়ে যেতে পারে । অন্যদিকে তেমনি বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলা তৃণমূলের অনেক মন্ত্রী, বিধায়ক ও নেতা ফেঁসে যাবেন বলে মনে করা হচ্ছে । সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে খুব একটা সহজ হবে না ।।