জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বোলপুর,২৬ জুলাই : মাত্র কয়েক দিন আগে প্রাণচঞ্চল প্রিয় ডাক্তার বাবুকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে চমকে ওঠে সাধারণ মানুষ।তখন থেকেই আশঙ্কার কালো মেঘ জমতে থাকে। জমবেই বা না কেন? জ্যামিতিক হারে অধিকাংশ ডাক্তাররা যেখানে ‘ফিজ’ বাড়িয়ে চলেছেন সেখানে দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে মাত্র ‘এক টাকার’ বিনিময়ে তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেইসব মানুষের কাছে স্বাভাবিক ভাবেই ডাক্তার বাবু অমর, কোনো রোগ হতে পারে না। চরম সত্যটা মেনে নিয়ে অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মেনে ‘না ফেরার দেশে’ চলে গেলেন বাংলার রূপকার বিধানচন্দ্র রায়ের অন্যতম প্রিয় ছাত্র ডঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। মৃত্যুর সময় রেখে গেলেন একমাত্র কন্যা মন্দিরা ও জামাতা অঞ্জন এবং অসংখ্য গুণমুগ্ধকে। কয়েক বছর আগেই তিনি হারিয়েছিলেন পত্নী ছায়াদেবীকে।
বীরভূম ও আশেপাশের মানুষের কাছে তিনি ‘এক টাকার ডাক্তার’ নামে পরিচিত ছিলেন। প্রতিদিন প্রায় দেড়শ জনের মত রুগী দেখতেন। রুগীদের কাছে তার ডিগ্রি নয় মানুষটাই ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির পাশেই ছিল তার চেম্বার। অবশ্য মেয়ের অনুরোধে দু’একবার কলকাতায় রুগী দেখলেও ‘ফিজ’ ছিল সেই একটাকা। প্রসঙ্গত মায়ের নির্দেশে আজীবন তিনি মাত্র ‘এক টাকায়’ চিকিৎসা করে গেছেন। তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত করেছেন।
১৯৩৯ সালে ৩ রা সেপ্টেম্বর বোলপুরের হরগৌরিতলায় সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন। বরাবরের মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। বিদেশ থেকে ডাক্তারী পাস করলেও আপাদমস্তক তিনি বাঙালি ছিলেন। ধুতি পাঞ্জাবী তিনি বেশি পচ্ছন্দ করতেন। গত কয়েকদিন ধরেই বার্ধক্য জনিত কারণে তিনি অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য প্রথমে তাকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার মেয়ে-জামাই, যারা নিজেরাই ডাক্তার, তাকে উত্তর কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ডাক্তারদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সেখানেই তিনি ২৬ শে জুলাই সকাল ১১ টা ২৫ মিনিট নাগাদ পরলোকগমন করেন ।
তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে বোলপুর ও তার আশেপাশের গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। ইতিমধ্যে তাদের প্রিয় ‘ডাক্তার বাবু’-কে শেষ বারের মত চোখের দেখা দেখার জন্য বোলপুরের হরগৌরিতলায় তার বাড়ির সামনে মানুষের ঢল নেমেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যাচ্ছে আগামীকাল বোলপুরে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে প।
ডাক্তার বাবুর ভ্রাতৃপ্রতিম খায়রুল আনাম বললেন,’এরকম একজন মানুষের কাছে থাকা চরম সৌভাগ্যের এবং আমি সেই সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। এত বড় ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও কোনোদিন অর্থের পেছনে ছোটেননি। গরীব মানুষের জন্য তার ছিল অবারিত দ্বার। এমনকি করোনার সময়ও তিনি কাউকেই আশাহত করেননি। ডাক্তার বাবুকে হারিয়ে সত্যিই আমরা অনাথ হয়ে গেলাম ।’।