প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ জুলাই : ট্রেনে পাচার হয়ে যাওয়ার আগেই পৃথক পৃথক সময়ে বর্ধমান স্টেশন ও সংলগ্ন এলাকা থেকে তিন নাবালককে উদ্ধার করলো চাইল্ডলাইন।শনিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া কিশোররা অসম ,বিহার ও এই রাজ্যের হুগলী জেলার বাসিন্দা । সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নাবালকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সেরে ফেলেছে চাইল্ডলাইন । তিনজনকেই সোমবার শিশুকল্যাণ কমিটি বা সিডব্লুসির কাছে পেশ করে হয়েছে। নাবালকদের তাঁদের পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
দফতর সূত্রে এও জানা গিয়েছে ,দু’জন নাবালককে উদ্ধারর ক্ষেত্রে ট্রেন যাত্রীদের বড় ভূমিকা রয়েছে।ট্রেন যাত্রীরাই ফোন করে নাবালকদের বিষয়ে চাইল্ডলাইনে জানিয়েছিল। এর পরেই পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ওই দুই নাবালককে উদ্ধার করা হয়।অপর আর এক নাবালকের বিষয়ে বর্ধমান স্টেশনের সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর এলাকার একটি ক্লাবের সদস্যরা পুলিশকে খবর দেয়। সেখান থেকে ওই নাবালককে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনজনেই চাইল্ডলাইনের হেফাজতে রয়েছে ।
চাইল্ডলাইনের (বর্ধমান) কর্ণধার অভিজিৎ চৌবে বলেন, “তিনজনকেই কাউন্সেলিং করে জানতে পারা গেছে ,পাচার করার জন্য তাদের কে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।চাইল্ডলাইনের দাবি, শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ ‘১০৯৮’ ফোন নম্বারে হাওড়াগামী একটি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী ফোন করেন। তিনি জানান, ‘আট-দশ বছরের একজন নাবালকের সঙ্গে একজন বয়স্ক লোক রয়েছে। তাদের কথাবার্তা ও নাবালকের কান্না দেখে মনে হচ্ছে, পাচারের উদ্দেশে নাবালককে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রেনটি কিছুক্ষণের মধ্যেই বর্ধমান স্টেশনে ঢুকবে’।ফোনে এই খবর পাওয়া মাত্রই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে চাইল্ডলাইন । ট্রেন বর্ধমান স্টেশনে ঢোকা মাত্রই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই ট্রেনে তল্লাশি চালানো হয় । তল্লাশির সময়েই যাত্রীদের কাছ থেকে পুলিশ ও চাইল্ডলাইন কর্তৃপক্ষ জানতে পারে,বয়স্ক এক ব্যক্তি একটি নাবালককে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমেছে। খোঁজ চালাতে চালাতে বর্ধমান স্টেশনের ২ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে বিহারের ওই নাবালককে উদ্ধার করা হয় ।
এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ফের এক ট্রেন যাত্রী ফোনে জানায়, মুখে কালো কাপড়ে ঢাকা থাকা এক ব্যক্তি বছর চোদ্দর এক কিশোরকে বর্ধমান স্টেশনে নামিয়ে নিয়ে চলে গিয়েছে। তাকেও উদ্ধার করা হয়েছে । চাইল্ডলাইনের হেফাজতে থাকা ওই কিশোর রবিবার দাবি করে,’তাঁর বাবা কেরলে কাজ করেন।সে থাকে অসমে। বাবার কাছ থেকে হয়ে ষে বাড়ি ফিরছিল। ট্রেনেই একজনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় । ওই ব্যক্তি তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে আসবে বলে। হাওড়া-ডিব্রুগর ট্রেনে ওঠার পরেই ওই ব্যক্তি মুখে কালো কাপড় বেঁধে নেয়।তাঁকেও বাঁধতে বলে। বর্ধমান স্টেশনে তাঁকে নামিয়ে নিয়ে একটি ব্রিজের কাছে নিয়ে যায় ওই ব্যক্তি । সেখানে দাঁড়িয়ে কাউকে ফোনে করে ওই ব্যক্তি বলতে শুরু করে, ‘একজনকে নিয়ে এসেছি। চলে আয়। বর্ধমান থেকে অন্য জায়গাতে নিয়ে যাব’। ওই কথা শুনেই নাবালক ভয় পেয়ে গিয়ে চিৎকার করতে শুরু করে। সেই চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে এলে ওই ব্যক্তি নাবালককে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় ।’
এছাড়াও হুগলির বৈদ্যবাটি থেকে ভদ্রেশ্বরে জিলাপি কিনতে বেরিয়ে হারিয়ে যায় আর এক নাবালক । তার খোঁজ মেলে বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর মাঠের কাছে।বর্ধমানের লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকার একটি ক্লাবের ছেলেরা তাকে উদ্ধার পুলিশে খবর দেয় । ওই নাবালক দাবি করে,’জিলাপি কেনার জন্য বেরিয়ে ট্রেনে উঠে সে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । তার পর বর্ধমান স্টেশনে কী ভাবে চলে এল,সেটা তার মনে পড়ছে না ।।
ছবি : সৌজন্যে গুগুল ।