প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ জুলাই : প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করে পঞ্চায়েত ভবনে ভাঙচুর ও নথি লুটপাট করার অভিযোগ উঠলো পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার পলাসন গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে। পলাসন অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি বাসুদেব ঘোষের নেতৃত্বে ১০ জন পঞ্চায়েত সদস্য ও ২ জন পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য মিলে পঞ্চায়েত ভবন ভাঙচুর ও নথি লুটপাট চালিয়েছে বলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন প্রধান অর্চনা দাস পণ্ডিত। প্রশাসনের তরফে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,পলাশন পঞ্চায়েতে ১৫ জন সদস্য।তাঁদের সবাই তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ভোটে জিতে পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছেন। এলাকা সূত্রে খবর,সদস্যদের সবাই প্রধান ও উপ-প্রধানের দিকে নেই । প্রধান ও উপ-প্রধানের দিকে আছে মাত্র পাঁচ জন সদস্য । বাকি । ১০ জন অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি বাসুদেব ঘোষের দিকে রয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ জারি রয়েছে ।অঞ্চল সভাপতির অনুগতরা প্রধান ও উপ-প্রধানের বিরুদ্ধে ’অনাস্থা’ পোষণ করে প্রশাসনকে চিঠি দেন। কিন্তু দলের নির্দেশে শেষ পর্যন্থ ’অনাস্থা’ হয় নি । তার পর থেকে প্রায় ৮-৯ মাস ধরে অঞ্চল সভাপতির অনুগামী সদস্যরা পঞ্চায়েতে পা রাখেননি।
হঠাৎ করে বিক্ষুব্ধ সদস্যরা শুক্রবার পঞ্চায়েত ভবনে ঢুকে প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে স্বোচ্চার হন । তাঁরা প্রশ্ন তোলেন তাঁরা পঞ্চায়েতের কোন বৈঠকে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও কি ভাবে অর্থ-সমিতির সভায় লেনদেন পাস হয়ে যাচ্ছে ? এই নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে বিক্ষোভ চলার পরেও প্রধান-উপপ্রধানকে পঞ্চায়েতে দেখতে না পেয়ে বিক্ষুব্ধরা পঞ্চায়েতে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ।
প্রশাসনের কাছে দায়ের করা অভিযোগে প্রধান জানিয়েছেন, “পঞ্চায়েত অফিস থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রামবাটিতে শুক্রবার
’দুয়ারে সরকারের’ শিবির চলছিল। সে সময় তিনজন পঞ্চায়েত সদস্যের নেতৃত্বে ভাড়াটে গুণ্ডারা পঞ্চায়েত ভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালায়, নথি লোপাট করে ।’
যদিও প্রধানের আনা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সুরেন্দ্র দলুই নামে এক সদস্য বলেন, “অর্থ-সচিব ছাড়া কী ভাবে অর্থ কমিটির বৈঠক হয়? দুর্নীতি করে এইসব হচ্ছে।আর এইসব করেই পঞ্চায়েতের টাকা তছরূপ হয়েছে।তার হিসেব আমাদেরকে দিতে হবে।“ অপর বিক্ষুব্ধ সদস্যরা বলেন,“দীর্ঘদিন পঞ্চায়েতে উন্নয়ন হয়নি। পঞ্চায়েত থেকে কোনও কাজ পাওয়া যায় না। ৯ মাস ধরে ১০ জন সদস্য পঞ্চায়েতে যাচ্ছেন না,তার পরেও কি ভাবে পঞ্চায়েত চলল তার জবাব প্রধান ও উপ-প্রধানকে দিতে হবে “। উপ-প্রধান সামসুদ্দিন মণ্ডলের দাবি, “গত ৮-৯ মাস ধরে প্রতিটি বৈঠকে ১০জন সদস্যকে ডাকা হয়েছে। দুয়ারে সরকার কর্মসূচিও চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছি।তার পরেও কেউ অসহযোগিতা করলে কি আর করা যাবে ?’
এদিকে পলাসন পঞ্চায়েত অফিসে হওয়া এদিনের ঘটনা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে শাসক ও বিরোধীদের রাজনৈতিক তর্জা ।বিজেপি বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের এদিন কটাক্ষ করে বলেন,তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছে পঞ্চায়েত অফিস। মূলত কোন গোষ্ঠী করে খাবে তা নিয়েই ওদের লড়াই।“ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, “বিজেপির অভিযোগের কোনো গুরত্ব নেই। তবে বিক্ষোভ কাম্য নয়। দলীয় স্তরে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।’।