প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ জুলাই : ড্যান্স অরকেষ্ট্রা দলে নাচ করার প্রবল ইচ্ছা চেপে বসেছিল মনে।তাই স্কুলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গোপনে বিহার চলে যায় ১৩ বছর বয়সী নাবালিকা ছাত্রী।এদিকে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে গিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মেয়ে বাড়িতে না ফেরায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় ছাত্রীর বাবা ও মা। মেয়েকে ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁরা পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন।তদন্তে নেমে বিহার পৌছে গিয়ে রায়না থানার পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করলো। নাবালিকাকে সঙ্গে নিয়ে এক পুলিশ অফিসার ও তিন পুলিশ কনস্টেবল বৃহস্পতিবার রাত বিহার থেকে রায়নায় ফেরেন।পুলিশ মেয়েকে বিহার থেকে উদ্ধার করে দিতে পারায় স্বস্তিতে নাবালিকার পরিবার।নাবালিকাকে শুক্রবার বর্ধমান আদালতে পেশ করার পর আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে পুলিশ তাকে তাঁর বাবা মায়ের হাতে তুলে দেয় ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে,বছর
ওই নাবালিকা ছাত্রীর বাড়ি রায়নার বহরমপুর গ্রামে । গত ৪ জুলাই আনুমানিক বেলা ১০ টা নাগাদ বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয় নাবালিকা । তার পর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও মেয়ে বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান ছাত্রীর বাবা ও মা ।পরদিন ছাত্রীর মা রায়না থানার পুলিশের দ্বারস্থ হন । ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ পেয়েই পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্তে নামে ।ছাত্রীর মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারে ,“ড্যান্স অরকেষ্ট্রা দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ছাত্রীর বাবা মা।তাঁরা বিহারেও অনুষ্ঠান করতে যান। ছোট মেয়েকে বাড়িতে রেখে যাওয়া সম্ভব নয় বলে তাঁরা মেয়েকে সঙ্গে নিয়েই অনেকবার বিহারে গিয়েছেন। ছাত্রীরও যে ড্যান্স অরকেষ্ট্রা দলে নাচার ইচ্ছা প্রবল ভাবে তৈরি হয়েছিল সেই বিষয়টিও তাঁর বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে পুলিশ।
তদন্তে এইসব তথ্য উঠে আসার পর রায়না থানায় পুলিশ ছাত্রীর সন্ধানে বিহার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।ছাত্রীর বাবা মায়ের কাছ থেকে পুলিশ বিহারে থাকা তাঁদের পরিচিত শিল্পিদের ফোন নম্বার সংগ্রহ করে ।ওই ফোন নম্বারের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে তারা বিহারের শিয়ান জেলার ধুরন্ধ এলাকায় রয়েছেন।এরপরেই জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেনের অনুমতি নিয়ে ১৩ জুলাই সকালে রায়না থানার তদন্তকারী অফিসার গনেশ সেন সহ মহিলা কনস্টেবল হানিফা খাতুন ও অপর দুই কনস্টেবল রাজু কিস্কু ও গোবিন্দদাস মুখার্জী বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।সঙ্গে ছাত্রীর বাবা মাও থাকে ।৭০০ কিমি পথ অতিক্রম করে ওইদিন রাত প্রায় আড়াইটে নাগাদ ধুরন্ধ এলাকায় পৌছায় রায়না থানার ওই পুলিশ দল।সেখানকার স্থানীয় থানার পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওইদিন ভোররাতে রায়না থানার পুলিশ ছাত্রীর বাবা ও মায়ের পরিচিত শিল্পি দম্পতির বাড়িতে পৌছে যায় ।সেখানেই হদিশ মেলে রায়নার বহরমপুর গ্রামের নিখোঁজ ছাত্রীর ।
জিজ্ঞাসবাদে বিহারের ওই শিল্পি দম্পতি পুলিশ কে জানায়,তাঁরা জানতেন না নাবালিকা মেয়ে বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে বিহারে তাঁদের বাড়িতে পালিয়ে এসেছে।কারণ তাঁদের বাড়িতে এসেই নাবালিকা বলেছিল ,’সে তাঁর বাবা ও মা কে জানিয়েই বিহারে আমাদের বাড়িতে এসেছে’।এর পর নাবালিকা পুলিশকে জানায় ,সেও ড্যান্স অরকেষ্ট্রা দলে নাচের শিল্পি হতে চায়। কিন্তু তাঁর বাবা ও মা এখন তাঁকে শুধুই লেখাপড়া ভালো ভাবে করে যাওয়ার কথা বলে যাচ্ছে। তাই ড্যান্স অরকেষ্ট্রা দলে নাচবে বলে সে ৪ জুলাই স্কুল যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা বর্ধমান স্টেশনে পৌছে যায়।সেখান থেকে ট্রেনে চেপে বিহারে পৌছে সে তাঁর বাবা মায়ের পরিচিত শিল্পিদের বাড়িতে চলে এসেছে। বাবা ও মাকে না জানিয়ে বিহারে পালিয়ে আসার কথা নিজেই গোপন রেখেছিল বলে ছাত্রী রায়না থানার পুলিশকে জানায় ।এরপর রায়না থানার পুলিশ ছাত্রীকে উদ্ধার করে নিয়ে বিহার থেকে রায়নায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে ।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিন) সুপ্রভাত চক্রবর্তী
জানিয়েছেন ,ড্যান্স অরকেষ্ট্রা দলে নাচ করার ইচ্ছা পূরণের জন্য নাবালিকা ছাত্রী বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে একাএকা বিহারে চলে গিয়েছিল।ছাত্রী নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে রায়না থানার পুলিশ বিহার থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তাঁর বাবা ও মায়ের হাতে এদিন তুলে দিয়েছে। এটা রায়না থানার পুলিশের বড় সাফল্য ।।