দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১৪ জুলাই : ঝাঁকলাইদেবী জ্ঞানে বিষধর প্রজাতির কেউটে সাপ পূজিত হল পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট ও ভাতারের সাতটি গ্রামে । প্রতিবছর আষাঢ় মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে মঙ্গলকোটের ছোটপোশলা, পলসোনা, মুশারু,নিগন এবং ভাতারের বড়পোশলা, শিকোত্তর, মুকুন্দপুর মিলে ৭ টি গ্রামে পূজো হয় ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী দেবীর । জ্যান্ত কেউটে সাপ ধরে মন্ত্রোচ্চারণের পাশাপাশি সাপের মাথায় ফুল,বেলপাতা,দুধ,গঙ্গাজল দিয়ে পূজো করেন পুরোহিত ৷ বৃহস্পতিবার ছিল বিশেষ এই তিথি । এদিন ঝাঁকলাই পূজোয় ঘিরে মেতে উঠতে দেখা গেল ওই সমস্ত গ্রামের বাসিন্দাদের ।
গ্রামবাসীদের দাবি, ঝাঁকলাই কাউকে কামড়ায় না । আর কোনও কারণে কামড়ালেও দেবীর মন্দিরের মাটি লেপে দিলেই বিষমুক্ত হয়ে যায় । তাই গ্রামের পথে ঘাটে,বাড়ির আনাচে কানাচে,এমনকি ঘরের ভিতরে এই সাপ ঢুকলেও কেউ ভয় পাননা । যুগ যুগ ধরে এভাবে বিশেষ প্রজাতির এই কেউটে সাপের সঙ্গে সহবস্থান করে আসছেন গ্রামবাসীরা । এমন নজির পূর্ব বর্ধমান জেলার মধ্যে আর কোথাও দেখা যায় না । মঙ্গলকোট ও ভাতারের ওই সাত গ্রামবাসীরা ওই কেউটে সাপের এই প্রজাতিটিকে সাক্ষাৎ দেবী মনসা হিসাবেই মনে করেন । তাঁদের ধারণা, দেবী ঝাঁকলাইই অন্যান্য বিষধর সাপের ছোবল থেকে গ্রামবাসীদের রক্ষা করে আসছেন ।
বংশ পরম্পরায় গ্রামবাসীরা মনে করেন, মনসামঙ্গল কাব্যের কালনাগিনীই হল আদপে ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশ্বরীদেবী । লখিন্দরকে লোহার বাসরঘরে দংশন করার পর পালানোর সময় বেহুলা কালনাগিনীকে লক্ষ্য করে কাজললতা ছুড়ে মেরেছিলেন । তাতে সাপের লেজের একাংশ কেটে যায় । ঝাঁকলাইয়ের লেজও কাটা । বেহুলার অভিশাপে মর্তে এসেছে কালনাগিনী । আর সেই থেকেই এই সাপ এলাকায় বসবাস করছে বলে বিশ্বাস ওই ৭ গ্রামের বাসিন্দাদের । তবে কাহিনী যাই থাকুক না কেন ঝাঁকলাই বা ঝঙ্কেশ্বরী দেবীর প্রতি বিশ্বাস আজও অটুট আছে । প্রতি বছর এই সময়ে আড়ম্বর সহকারে দেবীর পূজো হয় । সমাগম হয় প্রচুর পূণ্যার্থীর ।।