প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ জুলাই : দু’দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ ছিল পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলে থাকা দেশের মধ্যে সফল জুট পার্ক । এই ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ’শক্তিগড় টেক্সটাইল ও ইন্ডাস্ট্রিজ’ কর্তৃপক্ষের তরফে সঞ্জয় কাজোরিয়া চিঠি লিখে বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিকের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী ও জেলা শাসকের কাছে অভিযোগ জানান । চিঠি পাঠানোর পরে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বুধবার দুপুর থেকে পুনরায় চালু হল জুট পার্ক । তবে জুট পার্ক চালু হলেও সেখানের আইনটিটিইউসি ইউনিয়ন নিয়ে বিধায়ক ও তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েই গিয়েছে ।
জুট পার্ক সূত্রে জানা গিয়েছে,’গত ১১ জুলাই আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত চটকলের শ্রমিক ইউনিয়নের পাঁচজনের সঙ্গে বৈঠকে বসে তাঁদের ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। তাতে সহকারী শ্রম কমিশনার (বর্ধমান উত্তর) আগামী তিন বছরের জন্যে শ্রমিকদের মজুরি ঠিক করেন’। কিন্তু চুক্তি হয়ে যাওয়ার পরেও ওই ইউনিয়নকে মানেন না বলে দাবি করে কয়েকজন শ্রমিক চটকলের দরজায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন । তাঁরা দাবি তোলেন, নতুন করে শ্রমিক ইউনিয়ন করে চুক্তি করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে মঙ্গলবার জুট পার্ক
কর্তৃপক্ষ জানায়,তাঁদের জুট পার্ক হল দেশের মধ্যে সফল জুট পার্ক । এখানে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে । প্রায় আড়াই হাজার কর্মী এখানে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেন । এমন সফল সংস্থার দরজার সামনে বিধায়ক নিশীথ মালিক ’উপদ্রব’ করছেন । তাঁর মদতে চটকলের মূল দরজা আটকে বিক্ষোভ চলছে। আইএনটিটিইউসির নিবন্ধকৃত ইউনিয়নের বদলে বিধায়ক নিজস্ব গোষ্ঠীর লোকেদের নিয়ে ইউনিয়ন করতে চাইছেন। ওই চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, জাপানের একটি ক্রেতা-দল চটকলে এসে ‘ধর্মঘটে’র মুখে পড়েছেন বলে জুট পার্ক কর্তৃপক্ষ মুখ্যমন্ত্রীকে জানান । সূত্রের খবর,দার্জিলিঙে বসে এই অভিযোগের বিষয়টি জানতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী । ততক্ষণাৎ তিনি বিষয়টি দেখার জন্যে সঙ্গে থাকা অরূপ বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেন । অরুপ বিশ্বাসের কাছ থেকেই নিশীথ মালিক মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কথা জানতে পারেন । জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা বলেন, ‘বুধবার দুপুর থেকে ওই চটকলে উৎপাদন শুরু হয়েছে ।’
এই বিষয়ে বর্ধমান ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তথা ওই চটকলের আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি অম্বিকা দাস বলেন, “সংগঠন আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। সে জন্যেই আমরা পাঁচজন চুক্তিতে সই করেছি। কিন্তু সেই সংগঠনকে বাদ দিয়ে বিধায়ক নিজের স্বার্থে শ্রমিকদের উস্কে দিয়েছিলেন। আর উৎপাদন বন্ধ রাখা করিয়ে দিয়ে বিধায়ক আখেরে শ্রমিকদেরই ক্ষতি করেছেন’। বিধায়ক নিশীথ মালিক যদিও বলেন,’ওই পাঁচজন মালিকের দালাল। তাই শ্রমিকরা নিজেদের ইউনিয়নের দাবি তুলেছে। সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে এ নিয়ে তাঁর কথা হয়েছে।’
এ দিন দুপুরে চটকলের মূল দরজায় কর্মীদের বিক্ষোভ সমাবেশে গিয়ে বিধায়ক নিশীথ মালিক বলেন,“আমার নামে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। আমি চাই আমাদের এলাকার এই মিল সুন্দরভাবে চলুক। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এখানে আমি ছুটে এসেছি। শ্রমিকদের অনুরোধ করব, উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার জন্যে কাজে যোগ দিতে।’ বিধায়ক এও বলেন,’যে পাঁচজনকে চুক্তিপত্র হয়েছে তাঁরা মালিকের দালাল। তাই শ্রমিকরা নিজেদের ইউনিয়নের দাবি তুলেছেন। সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে।’
এদিন কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিধায়কের আলোচনা শেষ ওয়ার পরেই চটকল কর্তৃপক্ষ একটি নোটিস দিয়ে জানান,’১১ তারিখ দুপুর থেকে উৎপাদন বন্ধ ছিল। বুধবার দুপুর থেকে শ্রমিকরা যাতে কাজে যোগ দেন তারজন্যে আবেদন জানানো হচ্ছে।এরপর এ দিন দুপুর থেকে আংশিকভাবে চটকলের কাজ শুরু হয়। বুধবার বিকেলে মিল কর্তৃপক্ষ এও জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেই চটকল চালু করা সম্ভব হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ধীরে ধীরে উৎপাদনও আগের মত স্বাভাবিক হবে ।’।