প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৬ জুলাই : বাড়ি বাড়ি কল লাগানো হয়ে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে জলপ্রকল্পের উদ্বোধনও করানো হয়েগেছে।কিন্তু উদ্বোধনই সার। কল থাকলেও মিলছেনা জল।তাই পুকুরের জলই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। আর তা নিয়েই ক্ষোভে ফুঁষছেন পূর্ব বর্ধমানের গলসি ২ ব্লকের কুরকুবা গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়কৃষ্ণপুর, তারানগর,পিলগ্রাম ও সিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা।ক্ষোভ বিক্ষোভ সামাল দিতে জোরদার তৎপরতা শুরু করেছেন প্রশাসনিক কর্তারা।প্রতিবাদে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বও স্বোচ্চার হয়েছেন ।
গলসি ২ ব্লকের কুরকুবা গ্রাম পঞ্চায়েতের জয়কৃষ্ণপুর এলাকায় ১ কোটি ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয় পাবলিক হেল্থ ইঞ্জিনিয়ারিং (পিএইচই )এর নলবাহিত জল প্রকল্প । গত ২৯ জুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় দুর্গাপুরে দুই বর্ধমান কে নিয়ে হওয়া প্রশাসনিক বৈঠক করেন । সেই বৈঠকে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।তার মধ্যে অন্যতম ছিল গলসিতে নির্মিত হওয়া নলবাহিত জল প্রকল্প । ওই দিন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়,জয়কৃষ্ণপুরে নির্মিত জলপ্রকল্প থেকেই জয়কৃষ্ণপুর, তারানগর,পিলগ্রাম ও সিমুলিয়া গ্রামে বাড়ি বাড়ি নলবাহিত জল পৌঁছে যাবে।এই প্রকল্পের দরুন জয়কৃষ্ণপুর সহ তৎসংলগ্ন মৌজার প্রায় ৫৯৬৮ টি পরিবার উপকৃত হবে।কিন্তু প্রল্পের উদ্বোধন হয়ে যাওয়ার পর বাস্তবে ঘটে ঠিক এর উল্টোটাই ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগে জানিয়েছেন,প্রকল্প চালু হওয়ার পর জয়কৃষ্ণপুরের বাসিন্দারা জল পাচ্ছেন।কিন্তু তারানগর,পিলগ্রাম ও সিমুলিয়ায় গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি কল থাকা সত্ত্বেও কলে জল মিলছে না । সেই জন্যেই এইসব গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার তাঁদের সাংসারের দৈনন্দিন কাজ সারার জন্য পুকুরের জলে ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন ।
গ্রামবাসীরা অভিযোগে আরো জানান, বাড়ি বাড়ি কাল লাগানো হয়ে যাওয়ার পর কয়েক মাস আগে ৭ দিনের জন্য জল দেওয়া হয় । ওই সময়ে ঠিকাদার সংস্থার লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে আধার কার্ডের সাথে ’জিও ট্যাগিং’ করান।আর ’জিও ট্যাগিং’হয়ে যেতেই জল বন্ধ হয়ে যায় বলে গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন ।বাসিন্দারা বলেন ,সমস্যার কথা তাঁরা লিখিত আকারে ব্লকের পিএইচই
আধিকারিকে জামা দিয়েছেন ।কিন্তু সমস্যার কোন সুরাহা আজ অবধি হয়নি।
এই বিষয়ে গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাসুদেব চৌধুরী বলেন,এখনও পর্যন্ত গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পায়নি।একই সঙ্গে তিনি বলেন,প্রকৃতই যদি গ্রামবাসীদের এখনও পুকুরের জল ব্যবহার করতে হয় তবে সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার“।অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন,“কিছু জায়গায় জমি সংক্রান্ত ও পাইপ লাইনে সমস্যা থাকায় জল পৌঁছানো যাচ্ছে না।সমস্যার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।আশাকরা যাচ্ছে দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে“।
যদিও গলসির জল প্রকল্প নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপির বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। তিনি এদিন বলেন, আসলে প্রকল্পের নামে মানুষকে ভাওতা দেওয়া হচ্ছে।দিন দশেক জল দিয়ে জিও ট্যাগিং করে নেওয়ার অর্থ প্রকল্পের কাজ সফল ভাবে সম্পূর্ণ হয়ে গেছে তা
কেন্দ্রীয় দপ্তরকে জানান।কিন্তু বাস্তবে এর ঠিক উল্টোটাই হয়েছে।এইভাবেই তো কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।যদি প্রকল্প রেডিই না হয়ে থাকে তাহলে তড়িঘড়ি মুখ্যমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধনেরই বা কি দরকার ছিল ।’।