এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,০২ জুলাই : পাকিস্থান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা নতুন কিছু নয় । এমনকি দুই দেশের প্রশাসনের মধ্যেও ঢুকে গেছে মৌলবাদ । ফলে নিদারুন কষ্টের মধ্যে আছে দুই মুসলিম রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা । প্রায় প্রতিদিনই হিন্দুদের উপর অত্যাচারের খবর পাওয়া যায় এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে । আগে ঘটনাগুলি ধামাচাপা দেওয়া হলেও বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ওই সমস্ত ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে । সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে যে দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোড়ন পড়ে গেছে সেই দুটির মধ্যে প্রথমটি হল,আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকায় হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে (৩৫) পিটিয়ে খুনের ঘটনা । অভিযুক্ত ওই প্রতিষ্ঠানেরই দশম শ্রেণীর ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। আর দ্বিতীয়টি হল নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতোর মালা পড়িয়ে গোটা এলাকায় ঘোরানোর ঘটনা । তখন কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন খোদ নড়াইল জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) । দুটি ঘটনার পিছনেই কাজ করছে সাম্প্রদায়িক ও জিহাদি মানসিকতা । কিন্তু এই ‘জিহাদি’ মানসিকতাকে আড়াল করতে ‘রাজনীতি’ এবং ‘সামাজিক অবক্ষয়’-এর তত্ত্বকে সুনিপুণভাবে খাড়া করা চেষ্টা চলছে বাংলাদেশে ।
বাংলাদেশের রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ মন্তব্য করেছেন, ‘আমার শিক্ষকদের দেখলে এখনও পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি। কিন্তু এখন ছাত্র শিক্ষককে পিটিয়ে মারছে। আবার এক শিক্ষক আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে লেলিয়ে দিচ্ছেন। এগুলো ঘটছে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে ।’
অন্যদিকে নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতোর মালা পড়িয়ে ঘোরানোর ঘটনাকে রাজনৈতিক দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে । যেভাবে রাজস্থানের কংগ্রেস সরকার হিন্দু ব্যবসায়ীর শিরোচ্ছেদের ঘটনায় সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের যোগসুত্রের তত্ত্ব সামনে এনে রাজ্যের মধ্যে ক্রমবর্ধমান জিহাদি মানসিকতাকে আড়াল করতে চেয়েছিল,ঠিক একই কায়দায় জিহাদি মানসিকতাকে আড়াল করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশের সরকার ও পুলিশ ।
জানা গেছে,নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জুতোর মালা পড়ানোর ঘটনায় বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ওই কলেজের শিক্ষক আকতার হোসেনকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আকতার হোসেন ওই কলেজেরই রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।
নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে আকতার হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয় ।
বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা নড়াইলের সভাপতি ও নড়াইল আবদুল হাই সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মলয় কুমার নন্দী বাংলাদেশের এক সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, ‘কলেজের ভেতরে অধ্যক্ষবিরোধী শক্তি, যাঁরা ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের ইন্ধনে অধ্যক্ষকে অপদস্থ করা হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে ।’
কিন্তু এই দুই ঘটনার আগে ও পরেও হিন্দুদের উপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটে চলেছে । এর আগে ঢাকায় এক কলেজ শিক্ষিকার গায়ের উপর নিজের মোটরসাইকেল চাপিয়ে দিয়েছিল পুলিশের এক কনস্টেবল । শিক্ষিকার অপরাধ ছিল তিনি কপালে টিপ পড়ে প্রকাশ্যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন । এছাড়া গত ২২ জুন বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার হাজীপুরের বাসিন্দা সুজিত সূত্রধর নামে একজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে নৃসংশভাবে শিরচ্ছেদ করে কট্টরপন্থীরা । সুজিতবাবু একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী এবং হাজীপুর ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ছিলেন । বাংলাদেশে পরপর হিন্দু শিক্ষককে খুন বা নিগ্রহের ঘটনা ঘটায় এই নৃসংশ খুনের ঘটনা প্রচারে আসেনি । স্বভাবতই খুনিদের ধরতে বিশেষ উৎসাহী দেখায়নি বাংলাদেশ পুলিশ ।
এখন প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশে বারবার কেন আক্রান্ত হচ্ছে হিন্দুরা ? যদি সামাজিক অবক্ষয়ের কারনে এই ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অবক্ষয়টা কি শুধু মুসলিমদের মধ্যে হচ্ছে ? বাংলাদেশে ক’টা মুসলিম খুন হয়েছে হিন্দুদের হাতে ? আসলে শেখ হাসিনা সরকার ‘জিহাদি’ মানসিকতাকে ধামাচাপা দিতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল । কারন দেশে প্রো পাকিস্থানির সংখ্যা এতটাই বেশি যে এভাবে হিন্দুদের দমিয়ে রাখা ছাড়া বিকল্প রাস্তা নেই সরকারের কাছে । আর মিথ্যাকে সত্যি প্রমানিত করতে সুচতুরভাবে এগিয়ে দেওয়া হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদেরই ।।