জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,৩০ জুন : মানুষের জীবনে অন্যতম নীরব ঘাতক বা silent killer হলো ব্লাড সুগার। যার হয়েছে একমাত্র সেই জানে এর মাহাত্ম্য। চাপা tension নিয়ে জীবন্মৃত অবস্থায় বাকি জীবন কাটাতে হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন একেবারে বরবাদ করে দেয় । গোটা বিশ্বের চিকিৎসক কুল ব্লাড সুগার নিয়ে খুবই চিন্তিত।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মানুষের সমাজ জীবনে আর একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং মানুষের অজান্তেই যেটা দিনের পর দিন মারাত্মক আকার ধারণ করছে। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, অ্যালার্জি, একজিমা প্রভৃতির মত মারাত্মক রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে ভুগছে । আর এর পিছনে কারন হিসাবে মনে করা হচ্ছে আগাছা পার্থেনিয়ামকে । বিষাক্ত এই আগাছা থেকে রেহাই পাচ্ছে না গবাদিপশুরও । এই আগাছা খেলে অনেক সময় তাদের অন্ত্রে ঘা দেখা দেয়। দুধ উৎপাদনও কমে যায়। এমনকি পার্থেনিয়াম বেশ কিছু সব্জী উৎপাদন ব্যহত করে। ফসল উৎপাদন কমিয়ে দেয়।
পার্থেনিয়াম হল অ্যাস্টেরাসিয়া (Asteraceae) এবং অ্যাস্টেরয়ডিয়া (Asteroideae) পরিবারের অন্তর্গত হেলয়ান্থিয়া (Heliantheae) গোত্রের উত্তর আমেরিকার একটি গুল্ম প্রজাতি । আমাদের দেশে পার্থেনিয়ামের যে প্রজাতিটি দেখা যায় তার বৈজ্ঞানিক নাম হল পার্থেনিয়াম হিস্টেরোফোরাস (Parthenium hysterophorus)। এই প্রজাতির গুল্মটি খুবই বিষাক্ত । বিশেষ করে এর ফুলের রেনুতে ‘সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন ” ( Sesquiter-pene Lactone) জাতীয় বিষাক্ত পদার্থ যেটা ক্যাফেইক অ্যাসিড, পি-অ্যানিসিক অ্যাসিড, ভ্যানিলিক অ্যাসিড, অ্যানিসিক অ্যাসিড, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড এবং প্যারা-হাইড্রক্সি বেনজয়িক অ্যাসিড প্রভৃতি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে গঠিত। এগুলো জীবদেহের সংস্পর্শে এলে বিপদ অনিবার্য ।ক্ষতস্থান দিয়ে রক্তের সঙ্গে মিশে চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে । ফুলের রেণু শ্বাসের মধ্যে ফুসফুসে গিয়ে শ্বাসরোগ দেখা দেয় ।
আমাদের দেশ কিন্তু সূর্যমুখী উপজাতির উদ্ভিদ পার্থেনিয়ামের জন্মভিটে নয়। এর আদি নিবাস উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা। সেখান থেকে গম আমদানির সময় কিছুটা অনুপ্রবেশকারীর মত আমাদের দেশে এসেছে। তারপর দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এই গাছের বীজ খুবই ছোট। গোবর, গাড়ির চাকা, সেচের জল, বাতাস প্রভৃতির হাত ধরে রাজস্থানের থর মরুভূমি বাদ দিয়ে ভারতের প্রায় সমস্ত রাজ্যে নিজের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। আমাদের অ-সচেতনতার সুযোগ নিয়েই পার্থেনিয়াম সড়ক পথ, রেলপথ, নদীর পাড় এমনকি জনবসতি এলাকাতেও বংশবিস্তার করে ফেলেছে। এমনভাবে থাকে যেন মনে হবে পথিকদের স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে! বাস্তবে সমস্ত পরিবেশকে করে তুলেছে বিপজ্জনক।
কেউ কেউ বলেন পার্থেনিয়াম গাছের উপর কেরোসিন বা নুন-জল ছিটিয়ে দিলে গাছটি নাকি মরে যায়। তবে যে কাজটাই করা হোক না কেন সাবধানে করতে হবে। তবে সবার আগে দরকার গণ সচেতনতা ।
কথা হচ্ছিল উদ্ভিদ বিদ্যার শিক্ষিকা অঙ্কনা ব্যানার্জ্জীর সঙ্গে। তিনি বললেন ‘আমাদের অজ্ঞানতার জন্যেই পার্থেনিয়ামের এত বাড়বাড়ন্ত। সবুজ পাতার সঙ্গে সাদা ফুল – দেখতে ভাল লাগলেও এড় আড়ালে যে কি বিষ লুকিয়ে আছে সাধারণ মানুষ জানেই না। গ্রাম বাংলায় শিশুদের এই গাছের ফুল নিয়ে খেলা করতে দেখা যায়। এর কুফল সম্পর্কে অবিলম্বে যদি সরকারি স্তরে প্রচার শুরু না হয় তাহলে করোনা ভাইরাসের থেকেও কঠিন পরিস্থিতি আসতে পারে। শুধু তাই নয় একে বিদ্যালয় স্তরের পাঠ্যসূচীতেও আনতে হবে। এক কথায় পার্থেনিয়মের বিরুদ্ধে আমাদের কোমর বেঁধে লড়াইয়ে নামতে হবে ।’।