এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ জুন : মঙ্গলবার আসানসোলের জনসভায় ভাষন দেওয়ার সময় ২১ শে জুলাই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘জিহাদ ঘোষণা’র ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এবার এই ‘জিহাদ’ শব্দ প্রয়োগ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালো রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব । বুধবার সন্ধ্যায় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির একটি প্রতিনিধিদিল রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সঙ্গে দেখা করে এনিয়ে অভিযোগ জানান । পাশাপাশি তাঁরা তৃণমূল সরকারকে বরখাস্ত করে রাজ্যে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগেরও দাবি জানিয়েছেন ।
রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেড়িয়ে আসার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘এরাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান তথা মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল(মঙ্গলবার) আসানসোলে জনসভায় যে কথা বলেছেন তাতে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সমস্ত কার্যকর্তা, সমর্থক ও ভোটারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন । আমরা প্রশাসনিক প্রধানের এই ধরনের হুঙ্কারকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়ে সাংবিধাবিক প্রধানকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার জন্য আবেদন জানিয়েছি ।’ তিনি বলেন,’মুখ্যমন্ত্রী ২১ শে জুলাই শহীদ দিবসের দিন জিহাদের ডাক দিয়েছেন। এই জিহাদ শব্দটি নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন । জিহাদ হিন্দি,সংস্কৃত বা বাংলা শব্দ নয় । এটি সম্পূর্ণ রূপে আরবি শব্দ । এই শব্দের বাংলা অর্থ হল, ধর্মযুদ্ধের ডাক দেওয়া । শহীদ দিবসের সঙ্গে ধর্মযুদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই । উনি(মুখ্যমন্ত্রী) এই শব্দটি অত্যন্ত সচেতনভাবে বলেছেন । তাই এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত এবং ভীষনভাবে উদ্বিগ্ন ।’
তিনি বলেন, ‘এটা যে শুধু বিজেপির নেতাদের বলা হয়নি । এটা এরাজ্যে বিজেপির ২ কোটি ৩০ লক্ষ ভোটারকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে । যারা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন । এই কথাটা সেই ২ কোটি ২৮ লক্ষ ভোটারকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যারা ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন । আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করে দিয়েছেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান । তাই আমরা আজ সাংবিধানিক প্রধানের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছি।’
বিরোধী দলনেতার কথায়,’আমরা এই মুখ্যমন্ত্রীর জিহাদের নমুনা দেখেছি । সিএএ নিয়ে প্রথম নমুনা দেখেছি আমরা । মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার সিঁথি থেকে শ্যামবাজার হেঁটে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে ট্রেন,বাস পোড়ানো,রেলস্টেশন জ্বালানো, রাস্তা অবরোধ করা, প্রভৃতি যত রকমের নৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় তা করেছিল । এমনকি হিন্দুদের উপরে অত্যাচার পর্যন্ত হয়েছে । এরপর গত মে মাসের ২ তারিখের পর থেকে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা দেখেছি । যেখানে মগরাহাটের বিজেপি প্রার্থী মানস সাহাসহ আমাদের ৫৭ জন কর্মী,সংগঠন,সমর্থক আত্মবলিদান দিতে বাধ্য হয়েছেন । লক্ষাধিক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন । আমরা এই মুখ্যমন্ত্রীর জিহাদের শেষ নমুনা দেখেছি নূপুর শর্মার ইস্যুতে । তিনি চারদিন ধরে কিছু জিহাদিকে নৈরাজ্য সৃষ্টির অনুমতি দিয়েছিলেন। যারা রাষ্ট্রবিরোধী,যারা আলকায়দার সমর্থক,যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জামাতের যোগাযোগ আছে এবং যারা জিন্নার বংশধরেরা চারদিন ধরে তারা পশ্চিমবঙ্গে এন এইচ ৪ সহ হাওড়া,মুর্শিদাবাদ, নদীয়া জেলায় তারা যে তান্ডব চালিয়েছিল তার নমুনা আমরা দেখেছি । তাই মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা অনুপ্রাণিত তিনবার জিহাদ দেখার পরে আবার একটি জিহাদ ২১ শে জুলাই শুরু করার কথা তিনি ঘোষণা করেছেন । তাই এই সরকারকে অবিলম্বে বরখাস্ত করার জন্য আমরা রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানিয়েছি । আবেদন করেছি ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করে এই সরকারের বিরুদ্ধে যাতে ব্যাবস্থা নেওয়া হয় । রাজ্যপাল যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ।’
এদিন সন্ধ্যায় রাজভবনের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার পর ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন শুভেন্দু অধিকারী । রাজস্থানের উদয়পুরে দুই ইসলামিক জেহাদির দ্বারা কানহাইয়া লালের নৃসংস খুনের প্রতিবাদে ও নিহতের আত্মার শান্তি কামনায় কালীবাড়ী থেকে শুরু হওয়া মোমবাতি মিছিলে তিনি পা মেলান ।।