জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৮ জুন : ভারতবর্ষ হলো কৃষিপ্রধান দেশ । দেশের বৃহৎ সংখ্যক মানুষ কৃষিজীবি । কিন্তু আজও ফি বছর সেচের জল নিয়ে চুড়ান্ত নাকাল হতে হয় চাষীদের । যদিও কৃষকদের সেচের সুবিধার্থে সেচখাল তৈরি করা হয়েছে । তবে সেটা নামেই । কারন খাল দিয়ে জল গড়ায় না । তাই এখনো এই দেশের সিংহভাগ অংশের কৃষিকাজ মূলত বৃষ্টিপাত অথবা সাবমার্সিবল পাম্পের উপর নির্ভরশীল । এমনই চিত্র দেখতে পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রতিটি ব্লকে ।
পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্গত মঙ্গলকোটের চাণক অঞ্চলের বাসিন্দারা মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল । এখানে বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে দিয়ে চাষের জন্য সেচখাল থাকলেও সেগুলি দীর্ঘদিন ধরে চরম অবহেলায় পড়ে থাকে । চাষের জন্য সময়মতো জল পাওয়া তো দূরের কথা নিয়মিত সেগুলো সংস্কার পর্যন্ত করা হয় না বলে অভিযোগ । ফলে সেচখালগুলি আগাছায় ভরে আছে । এদিকে জল না পেয়ে ক্ষুব্ধ চাষীরা সেচখাল বন্ধ করে দিয়ে সেগুলো চাষযোগ্য জমি তৈরি করে ফেলেছেন । সেচখালেতে তাঁরা রীতিমতো চাষাবাসও করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে । কোথাও আবার স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় বেশ কিছু মানুষ সেচখালের পাড় দখল করে বসত বাড়ি তৈরি করে বসবাস করতে শুরু করেছেন ।
মঙ্গলকোট ব্লকের অন্তর্গত রামনগরের জনৈক প্রবীণ চাষী মনে করতে পারলেন না শেষ কবে তাদের গ্রামের সেচখালে জল গড়িয়েছিল । কবে সংস্কার করা হয়েছিল সেটাও খেয়াল করতে পারলেন না তিনি । নাম না প্রকাশ করার শর্তে ওই বৃদ্ধ চাষী বললেন,’মাঝে মাঝে শুনি প্রধান ক্যানেলে জল দিয়েছে কিন্তু একাংশের চাষীরা নাকি সেই জল আটকে রেখে এদিকে আসতে দিচ্ছে না । ফলে আমরা চাষ করতে পারছি না ।’ তাঁর আক্ষেপ জেলা প্রশাসন বা কোনো রাজনৈতিক দল আজ পর্যন্ত এর কোনো বিহিত করল না । তিনি ঠাট্টা করে বললেন, ‘এমনিতে জল না গড়ালেও নদীতে বান এলে অবশ্য আমাদের এই ক্যানেল দিয়ে জল বয়ে যায় । তখন মেছুরেরা জাল ফেলে মাছ ধরে । কিন্তু চাষের সময় জল আসেন না ।’ আগাছায় ঢাকা সেচ খাল দেখিয়ে তাঁর প্রশ্ন, ‘কবে আসবে আমাদের সেচখাল দিয়ে সেচের জন্য জল ?’
গ্রামবাসীরা আফশোস করে বলেন,’এই রাজ্যে কৃষিদপ্তর, কৃষিমন্ত্রী, কৃষি উপদেষ্টা এবং সেচখাল সবই আছে। নেই শুধু সেচখালে জল । পঞ্চায়েত, প্রশাসন থেকে শুরু করে শাসকদলের নেতারা সেচখালের বর্তমান বেহাল অবস্থা নিয়ে আশ্চর্যরকম ভাবে নীরব । এলাকার মানুষরা জানেও না এইসব সেচখালে কবে জল পাওয়া যাবে । আদপেই পাওয়া যাবে কিনা । কবে প্রশাসন ও শাসকদলের নজর পড়বে বেহাল সেচখালগুলির উপর ।’।