জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,গুসকরা(পূর্ব বর্ধমান),২৭ জুন : হাতে আর বিশেষ সময় নাই। কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। সরকারি নির্দেশ মেনে পয়লা জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হতে চলেছে। শুধু মৌখিক নিষেধ বা নির্দেশ নয়, ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জরিমানার ব্যবস্থাও করা আছে। জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে জোরকদমে কাজ করে চলেছে গুসকরা পুরসভা।
সভ্যতার নামাবলী গায়ে চাপিয়ে যত আমরা আধুনিকতার বুলি আউড়াচ্ছি তত আমরা পরিবেশের ক্ষতি করে চলেছি। নিত্য বাজার করতে যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে ব্যাগ না নিয়ে যাওয়াটা হয়ে উঠেছে ফ্যাশন। ভাবখানা দোকানদার প্লাস্টিকের ব্যাগে মাল দিয়ে দেবে। প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার যত বাড়তে শুরু করল তত সেটা পাতলা হতে হতে ৭৫ মাইক্রনের নীচে নেমে গেছে। একইসঙ্গে মানব সভ্যতার অস্তিত্বকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
এই প্লাস্টিক ব্যাগ এত পাতলা যে দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায় না। স্বাভাবিক ভাবেই অবহেলার আস্তাকুঁড়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয়। যত্র তত্র পড়ে থাকে এই প্লাস্টিক ব্যাগ। মানুষের অবহেলার জবাবও দেয় নিজস্ব ভঙ্গিতে। হাওয়ায় উড়ে এসে মানুষের অন্দরমহলে প্রবেশ করে অনায়াস ভঙ্গিমায়। সঙ্গে নিয়ে আসে নোংরা আবর্জনা। সবচেয়ে বেশি রাগ যেন জল নিকাশী ড্রেনের উপর। কখনো আমরা সরাসরি ঐ পাতলা প্লাস্টিক ফেলে দিচ্ছি ড্রেনের মধ্যে, কখনো বা উড়ে এসে ড্রেনের মধ্যে পড়ছে। ফলাফল সেই একই। নিকাশী ব্যবস্হা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। নোংরা জল এবং দুর্গন্ধে ভরে ওঠে এলাকা। বর্ষার সময় ভয়ংকর পরিস্থিতি হয়। আবার এগুলো পোড়ানো যায় না। সেক্ষেত্রে বিষাক্ত গ্যাসে ভরে ওঠে বাতাস।
এই পরিস্থিতিতে গুসকরা শহরবাসীকে প্লাস্টিক দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে গুসকরা পুরসভা। সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় গুসকরা হাটতলায়। ভোরবেলাতেই দূরদূরান্ত থেকে বিক্রেতারা সেখানে তাদের পসরা সাজিয়ে বসে। ক্রেতারা সেইসব জিনিস কিনতে সেখানে আসে। থাকে ফল, মাছ, খাসি বা মুরগির মাংস বিক্রেতারা। প্রায় প্রত্যেকেই প্লাস্টিকের ব্যাগে করে খরিদারকে বিক্রিত মাল দেয়। সমস্যা সৃষ্টি হয় তারপরই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য প্রায় প্রতিদিনই সকাল বেলায় পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য কাউন্সিলাররা হাজির হয়ে যাচ্ছেন গুসকরা হাটতলায়। অধিকাংশ সময় গুসকরা বীট হাউসের আধিকারিকদের দ্যাখা যাচ্ছে। কখনো কখনো কাউন্সিলাররা এককভাবে নিজ নিজ এলাকার দোকানগুলোতে হাজির হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই প্লাস্টিক ব্যাগের কুফল সম্পর্কে বোঝানো হচ্ছে। সবার লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গুসকরা শহরকে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ব্যাগ মুক্ত করা।
গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী বললেন,’আমাদের বিধায়কের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা কাউন্সিলাররা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসি। পাশে পাই গুসকরা বীট হাউসের ওসি অরুণ কুমার সোমসহ অন্যান্য আধিকারিকদের। শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং অন্যান্য দলীয় পদাধিকারীদের পরামর্শ মেনে কিভাবে আমাদের সবার প্রিয় গুসকরা শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করি। তারপর প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করে যাচ্ছি। আশাকরি সবার মিলিত প্রচেষ্টার ফলে গুসকরা শহর প্লাস্টিক মুক্ত হবে।’।