প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ জুন : প্রেমের প্রস্তাবে কিছুতেই রাজি হয়নি তরুণী। তাই তরুণীকে খুন করে দেওয়ায় উদ্দেশ্যে কলেজের ক্লাস রুমেই তাঁর গলা টিপে ধরে সহপাঠী প্রেমিক।নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকা অবস্থায় তরুণী কলেজের ক্লাস রুমের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারায়। তা দেখে প্রেমিকা মারা গেছে মনে করেনিয়ে সোজা থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করে প্রেমিক ।বরাত জোরে তরুণী প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রেমিকের এখন ঠাঁই হয়েছে শ্রীঘরে । সকলেরই এটা কোন সিনেমার চিত্রনাট্যের গল্প বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু না। বাস্তবেই প্রেমিকের প্রতিহিংসা পরায়নতার এমন রোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের রায়নায় শ্যামসুন্দর কলেজে । যে ঘটনার কথা জেনে স্তম্ভিত কলেজের অন্য পড়ুয়া থেকে শুরু করে শিক্ষকরাও ।
পুলিশ জানিয়েছে ,অভিযুক্ত প্রেমিক যুবকের নাম খালিকুজ্জামান মজুমদার । তাঁর বাড়ি রায়না থানার হাকৃষ্ণপুর গ্রামে ।তরুণীর বাড়ি একই থানা এলাকার মোগলমারি গ্রামে। দু’জনেই রায়নার শ্যামসুন্দর কলেজের বিএ ফাইনাল ইয়ারের পড়ুয়া ।কলেজ জীবনের শুরু থেকেই তুরণীর প্রতি আকৃষ্ট হয় সহপাঠী খালিকুজ্জামান। সে তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাবও দেয় ।কিন্তু তরুণী সেই প্রস্তাবে রাজি হয় না । তবে তিনি খালিকুজ্জামানের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখেন।এই বিষয়টি মনথেকে মেনে নিতে পারেনি খালিকুজ্জামান। সে স্বপ্ন দেখতো সহপাঠী তরুণীকে বিয়ে করার । কোন ভাবেই তিনি এই ব্যাপারে তরুণীকে রাজি করাতে পারেনি।এরই মধ্যে খালিকুজ্জামান জানতে পারেন,অন্য যুবকের সঙ্গে তাঁর ভালবাসার পাত্রীর বিয়ের ঠিক করছে তার পরিবার।এমনটা জানার পর থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল প্রেমিক যুবক। শুক্রবার ছিল তাঁদের বিএ ফাইনাল ইয়ারের শেষ দিনের পরীক্ষা। ওই তরুণী ও খালিকুজ্জামান দু’জনেই পরীক্ষা দেন।পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ক্লাস রুমেই সহপাঠী তরুণীর উপর আক্রোশ মেটানোর জন্য উদ্যত হয় প্রেমিক যুবক।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে তুরুণী ওই দিন রাতে পুলিশকে অভিযোগে জানান,তিনি সহপাঠী খালিকুজ্জমান মজুমদারের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেননি । যুবকের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন। এটা মেনে নিতে পারেনি খালিকুজ্জমান । অন্যত্র তাঁর বিয়ের দেখাশুনা হচ্ছে জানতে পেরে যায় খালিকুজ্জমান। তাই তাঁকে যাতে অন্য যুবক বিয়ে করতে না পারে সেই জন্য তাঁকে খুন করার পরিকল্পনা কষে ফেলে খালিকুজ্জমান।তরুণী পুলিশকে এও জানিয়েছেন,’শুক্রবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই ক্লাস রুমের মধ্যে তাঁর গলা টিপে ধরে খালিকুজ্জমান । তখন তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে ।নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার পর জ্ঞান হারিয়ে তিনি ক্লাস রুমের মেঝেতে পড়ে যান ।তিনি মারা গেছেন মনে করে নিয়ে খালিকুজ্জমান ক্লাস রুম ছেড়ে পালায় ।’শ্যামসুন্দর কলেজের প্রিন্সিপাল গৌরিশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ও একই কথা পুলিশ কে জানান।
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ)সুপ্রভাত চক্রবর্তী
শনিবার জানিয়েছেন ,শুক্রবার দুপুর ৩টে ১৫
মিনিট নাগাদ কলেজ ছাত্র খালিকুজ্জমান মজুমদার রায়না থানায় হাজির হয় । পুলিশ কে সে বলেন, ‘শ্যামসুন্দর কলেজের ক্লাসরুমেই সেই তাঁর সহপাঠী ছাত্রী কে খুন করেছে ।’
এমনটা শোনার পরেই যুবককে আটক করে পুলিশ দ্রুত শ্যামসুন্দর কলেজে পৌছায় । সেখানে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকা ছাত্রীকে উদ্ধার করে চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয় । সেখানে জ্ঞান ফিরলে ছাত্রীকে পাঠানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে । শ্যামসুন্দর কলেজের প্রিন্সিপাল গৌরিশংকর
বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছ থেকেও পুলিশ ছাত্র
খালিকুজ্জমানের কীর্তির কথা জানতে পারে ।
এই সবের ভিত্তিতে শ্লীলতাহানি ও খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রকে । শনিবার ধৃতকে পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে । বিচারক ধৃতকে জেল হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ।।