জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,নদীয়া,২৫ জুন : জন্মগত ত্রুটি নিয়ে অনেকেই জন্ম গ্রহণ করেন। চোখ না থাকার জন্য পৃথিবীর রূপ দেখার আগেই অনেকেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। অনেকের আবার পরবর্তীকালে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ত্রুটি দেখা যায় এবং শেষ পর্যন্ত আধুনিক চিকিৎসাও তাকে সুস্থ করে তুলতে পারে না। অথচ সময়মতো অঙ্গ পেলে বহু মানুষ হয়তো বেশ কয়েক দিন পৃথিবীতে আনন্দ উপভোগ করতে পারত। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। প্রচারের অভাবে ইচ্ছে থাকলেও অনেকে মরণোত্তর অঙ্গদান করতে পারে না। অনেক সময় কুসংস্কারও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তার মাঝেও দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর ধরে প্রশংসনীয় কাজ করে চলেছে কলকাতার গণদর্পণ সংস্থা ।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগে ২৫ শে জুন নদীয়ার মাজদিয়ার পাপিয়া করের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সদস্য সহ মোট পনেরো জন মানুষ মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন। একটা বাড়িতে বসে একসঙ্গে এতজন মানুষের মরণোত্তর অঙ্গদান কার্যত এক বিরল ঘটনা। সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিটি অঙ্গীকার দাতার হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি করে চারাগাছ।
সমাজসেবী হিসাবে নদীয়া ও আশপাশের এলাকার এক সুপরিচিত মুখ হলেন পাপিয়া। গত কয়েক বছর ধরে পাপিয়া কলকাতার ধর্মতলার পথ শিশুদের পড়াশোনায় সাহায্য করে চলেছে। দুস্থ ছাত্রীদের জন্য বাড়িতে আছে আস্ত একটা লাইব্রেরি। ওর ‘অন্নপূর্ণা’ ঘর থেকে বেশ কিছু গরিব মানুষ নিয়মিত খাবার পায়।
প্রসঙ্গত রানাঘাট স্টেশনের প্লাটফর্মে গোবিন্দ দাস নামে জনৈক প্রতিবন্ধীর দেখভাল করতে করতে পাপিয়া ও গোবিন্দের মধ্যে ভাইবোনের পবিত্র সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২৫ শে জুন ছিল গোবিন্দের জন্মদিন। সেই উপলক্ষে ১৫ জন মানুষ মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন। শুধু তাই নয় মরণোত্তর দেহদানের খবর পেয়ে পাপিয়ার আরও অনেক বন্ধু তার বাড়িতে ছুটে আসেন এবং মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন। সুদূর কলকাতা থেকে মাজদিয়া চলে আসেন জিতেন শর্মা এবং তার পরবর্তী বিবাহ বার্ষিকীর দিন মরণোত্তর অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন।
গণদর্পণের পক্ষে থেকে এই অঙ্গদান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংস্হার সম্পাদক মণিশ সরকার। তিনি বলেন – এইভাবে সমস্ত কুসংস্কার ও দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে মানুষ যদি এগিয়ে আসে তাহলে অনেক মানুষ পৃথিবীর রূপ যেমন উপভোগ করতে পারবে তেমনি অনেক অসুস্থ মানুষ অঙ্গ পেয়ে হয়তো আরও কিছুদিন সুস্থভাবে বাঁচার সুযোগ পাবে।
পাপিয়া দেবী বললেন,’আমার গোবিন্দ ভাইয়ের মত আরও অনেক অসহায় ভাইবোন আছে। এদের জন্য খুব কষ্ট হয়। জন্মালে তো একদিন মরতেই হবে। মৃত্যুর পরেও যদি আমার কোনো অঙ্গ নিয়ে কারও উপকার হয় তার থেকে আনন্দের কি আছে। অঙ্গ গ্রহীতাদের মধ্য দিয়ে আমি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকব।’
অঙ্গদানের অঙ্গীকারকারীদের অন্যতম ছবি নাথ হলেন ব্যারাপুরের একটি মিশনের বিশেষ ভাবে চাহিদা সম্পন্ন কিশোরীদের শিক্ষিকা। তিনি একজন শিল্পী। তিনি বললেন,’দিনের পর দিন এইসব কিশোরীদের শিক্ষা দেওয়ার সময় খুব খারাপ লাগে। সামান্য ইশারাতেই এরা কত সহজেই নৃত্য রপ্ত করে। অথচ ওদের অঙ্গ জনিত ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য সমস্যা হয়। ওদের জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল। ভগ্নীসমা স্নেহের পাপিয়ার জন্য সেই সুযোগ এসে গ্যালো। ওকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশাকরি আগামী দিনে আরও অনেকেই মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করবেন ।’।