এইদিন ওয়েবডেস্ক,নদীয়া,২৫ জুন : নূপুর শর্মার ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদের নামে হিংসার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উৎসাকানি দেওয়ার অভিযোগ তুললেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । শনিবার নদীয়া উত্তরের ধুবুলিয়ায় একটি জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু । ভিড়ে ঠাসা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নূপুর শর্মার ইস্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সকাল বেলায় টুইট করে এই বাংলায় প্রথম উসকানি দিলেন । তারপরে হাওড়ার এনএইচ ৪ অবরোধ করা হল । চারদিন ধরে মিছিলের নামে পুলিশের সামনে হিন্দুদের আক্রমণ করা হল । কোথায় হয়নি বলুন ? রেজিনগরের শক্তিপুরে বেছে বেছে হিন্দুদের বাড়ি আর দোকান জ্বালানো হয়েছে । বেলডাঙ্গাতে পাথর আর সকেট বোমা ছোড়া হয়েছে । নাকাশিপাড়া, বেথুয়াডহরির ২১ টি দোকান ভাঙচুর আর লুট করা হয়েছে । আজ এই ২১ জনের হাতে বিজেপির পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাবো । যাদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে । যাদের অল্প ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের পুরোটাই দলের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে ।’
তিনি বলেন,’আর তিনটে জিনিষ আমি তাদের হাতে তুলে দেবো । একটা দেবী মা দূর্গার ছবি । ওই ছবিটা দোকানে রাখবেন । মাকে রোজ স্মরণ করবেন । একটা করে গীতা দেবো । আর একটা করে শাঁখ দিয়ে যাবো । এরপরে ওই জিন্নার বংশধররা এলে শাঁখটা বাজাবেন এবং ওরা যে ভাষাতে কথা বললে ওরা সন্তুষ্ট হবে ওই ভাষাতেই কথা বলবেন ।’
শুভেন্দু বলেন,’এখনও কিছু হিন্দু বন্ধুরা কেউ কেউ তৃণমূল করেন । কেউ কেউ সিপিএম করেন । সেই বন্ধুদের বলবো বেশিদিন বাকি নেই । ২০২১ সালের অষ্টমীর দিন বাংলাদেশে দূর্গা ঠাকুরের বিসর্জন হয়ে গেছে । পাঁচ’শ মন্ডপ ভেঙেছে । আর এখানে যদি পিসি আর ভাইপো থাকে তাহলে ২০৩১ সালে বাংলারও বিসর্জন হয়ে যাবে । তাই যারা সনাতন সংস্কৃতিকে বিশ্বাস করেন তারা একজোট হন । যারা রাষ্ট্রবাদী মুসলিম নিজেদের এপিজে আবদুল কালাম কে আদর্শ মনে করেন তারাও আসুন । আসুন আমরা এক সঙ্গে এই দেশকে রক্ষা করি ।’
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এদিন সিএএ এবং এন আর সি লাগু করার বিষয়ে সওয়াল করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’সিএএতে তাড়াবার কথা বলা হয়নি,নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । আর এই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিএএ মানিনা বলে কলকাতায় হেঁটেছিলেন । তার পরেই এরাজ্যে আগুন জ্বলেছিল । আপনারা দেখেছেন কিভাবে সিএএ নিয়ে বেলডাঙ্গা,রেজিনগর স্টেশন জ্বালানো হয়েছে । হাজারদূয়ারি এক্সপ্রেস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । কতদিন ট্রেন বন্ধ ছিল,পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে নৈরাজ্য ছিল ।’ তিনি বলেন,’মহারাষ্ট্র হয়েছে,ঝাড়খণ্ড আর পশ্চিমবঙ্গ এবার হবে । ২৪ শে সাফ হয়ে যাবে তৃণমূল । লোকসভা আর বিধানসভা একসঙ্গে হবে । রাষ্ট্রবাদী সরকার হবে । তাই আলকায়দার বন্ধুরা, হিজবুল মুজাহিদ্দিনের ভাইয়েরা, জামাতের সমর্থকরা আর জিন্নার বংশধরেরা মনে রাখবে যোগী আদিত্যনাথজী যা করছেন এখানেও তাই হবে ।’
তিনি বলেন,’নাকাশিপাড়ায় ১৪৪ ধারা উঠলেই আমি আসবো । কি করতে আসবো জানেন ? আমি বিরোধী দলনেতা হিসাবে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা করে বেতন পাই । প্রাক্তন এমপি হিসাবে ৪৫ হাজার টাকা করে পেনশন পাই । আমার অ্যাকাউন্টে যত টাকা আছে সব চেক লিখে ওখানকার ব্যাবসায়ী সমিতির হাতে দিয়ে যাবো । ওই টাকায় যাতে তারা এলাকার সব মন্দিরগুলিতে সিসিটিভি লাগাতে পারে । এরপরে দেবগ্রাম পলাশীতেও ঢুকবো ।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে শুভেন্দু বলেন,’আজ থেকে পিসিমনীর স্টিকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হল । বাংলা আবাস যোজনা লিখেছিল । আজ সকাল থেকে মুছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা লিখে দিয়েছে । ৪০ লক্ষ বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা লেখাবো । পিসিমনি তোমার স্টিকারের রাজনীতি শেষ । এরপরে ৭০ লক্ষ শৌচাগারে লেখাবো, স্বচ্ছ ভারত মিশন । উনি লিখেছেন নির্মল বাংলা মিশন । আর ওই রেশন প্রধানমন্ত্রী দেয় । ব্যাগের উপর তোমার ছাপ । ওই জিনিস আর চলবে না ।’
মহারাষ্ট্র হয়েছে,ঝাড়খণ্ড আর পশ্চিমবঙ্গ এবার হবে । ২৪ শে সাফ হয়ে যাবে । লোকসভা আর বিধানসভা একসঙ্গে হবে । রাষ্ট্রবাদী সরকার হবে । তাই আলকায়দার বন্ধুরা, হিজবুল মুজাহিদ্দিনের ভাইয়েরা, জামাতের সমর্থকরা আর জিন্নার বংশধরেরা মনে রাখবে যোগী আদিত্যনাথজী যা করছেন এখানেও তাই হবে ।’
এদিনের শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের আগাগোড়াই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে । তিনি বলেন, ‘মোদিজী জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্নয়ন করেছেন । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট ব্যাঙ্কের জন্য এই রাজ্যটাকে জামাতের হাতে তুলে দিতে চাইছেন । কারন তারাই(মুসলমান)হচ্ছে তাঁর আসল ভোটব্যাঙ্ক । আপনারা দেখেছেন উলুবেড়িয়ার একটি বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । এই মুখ্যমন্ত্রীই মহরমের তাজিয়া যাবে বলে দুর্গাপূজার বিসর্জন পিছিয়ে দিয়েছিলেন । করোনার নাম করে কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পূজো আটকে দেওয়া হয়েছে । চাপড়ায় দুর্গাপূজার দিন মূর্তির উপর আক্রমণ হয়েছিল ।
এই মুখ্যমন্ত্রী নিজের ভোটব্যাঙ্ক ঠিক রাখার জন্য বারেবারে উসকানি দেন ।’ পরিশেষে এদিন ঘুঁষ ও নেতা মূক্ত কর্মসংস্থান,কাটমানি মুক্ত নাগরিক পরিষেবা এবং রাজনীতি মুক্ত পুলিশের শ্লোগান তোলেন শুভেন্দু অধিকারী ।।