প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ জুন : গাছ প্রকৃতিক সম্পদ । কেউ এই প্রকৃতিক সম্পদ কেটে বিক্রি করতে পারবে না। গাছ কাটলে কাউকে রেয়াত করা হবে না বলে সম্প্রতি মেদিনীপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মু্খ্যমন্ত্রী।কিন্তু তার পরেও গাছ কাটার ঘটনায় বিরাম পড়েনি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে । আগামী ২৭ জুন এই জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে করতে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে যথেচ্ছ ভাবে গাছ কাটার অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন জামালপুর ব্লক প্রশাসনের কর্তারা ।
জামালপুর ১পঞ্চায়েত অফিসের সন্নিকটে হালাড়া মোড় সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে সেচ খাল। সেই সেচ খালের পাড়ের কাছেই ছিল বড় বড় নানা গাছ ।গত দিন দু’দিন ধরে কিছু ব্যক্তি হঠাৎতই ওই সব গাছ একের পর এক কেটে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন ।এই ঘটনা খবর পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশানের কর্তাদের কাছে পৌছাতেই তাঁরা নড়ে চড়ে বসেন। শুরু হয় কারা গাছ কাটছে ও কাদের নির্দেশে গাছ কাটা হচ্ছে তা নিয়ে খোঁজ খবর নেওয়া।
প্রথমে ব্লক প্রশাসনের কর্তারা মনে করেছিলেন
বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় সেচখালের সংস্কার কাছ করছে সেচ দফতর। সংস্কার কজের সুবিধার জন্যে হয়তো সেচ দফতর সেচ খালের খালের ধারের থাকা গাছ কাটাচ্ছে।তদন্ত চালিয়ে মঙ্গলবার পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা জানতে পারেন,প্রশাসন ও বনদফতর কে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে । যে গাছ গুলি কাটা হচ্ছে সেগুলি বৃক্ষপাট্টা পাওয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অধীনে থাকা গাছ । তাঁরাই হঠাৎ করে গাছ কেটে নেওয়া শুরু করেছেন বলে প্রশাসনের কর্তারা জানতে পারেন।
গাছ কাটার কারণ জানতে পঞ্চায়েতের লোকজন ঘটনাস্থলে গেলে ওই সব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা দাবি করেন, “গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা করার জন্যে প্রতিটি গাছের দামের বেশিরভাগটা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের পাওনা ।বাকি টাকা পঞ্চায়েত পেয়ে থাকে। কিন্তু বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় সেচ খালের সংস্কারের নামে যথেচ্ছহারে গাছ কাটা হচ্ছে।কিন্তু সেই সব গাছ বিক্রির টাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলি আদৌ পাচ্ছে না।এমনটা ধরে নিয়েই গাছ কেটে নিচ্ছিলেন বলে প্রশাসনকে জানান জামালপুরের ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীয় সদস্যরা ।
স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের এই যুক্তি মেনে নিতে পারেন না পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন । তাদের তরফে বিষয়টি জামালপুর থানা ও সেচ দফতরে জানানো হয়। গাছ কাটার জায়গা সরোজমিনে খতিয়ে দেখে সেচ দফতরের আধিকারিকরা নিশ্চিৎ হন,যে জায়গার গাছ কাটা হচ্ছে সেই জায়গা সেচ দফতরের অধীনে নয়। সেচ খাল সংস্কারের জন্যেও ওই গাছ কাটার কোন সম্পর্ক নেই । এর পরেই জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে কাটা গাছ গুলি বাজেয়াপ্ত করে পঞ্চায়েতে জিম্মায় দিয়ে যায় ।
জামালপুরের সেচ দফতরের এসডিও দীনেশ ঠিকাদার বলেন,’যে জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছিল সেই জায়গাটা সেচ দফতরের অধীনে নেই । জায়গাটির পঞ্চায়েতের এক্তিয়ারভুক্ত। সেটা পঞ্চায়েতকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন ।’ জামালপুর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শাহাবুদ্দিন মণ্ডল বলেন,’পঞ্চায়েতের অজ্ঞাতে গাছগুলি কাটা হচ্ছিল। বিডিওর নির্দেশ মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।’ বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন,“গাছ কাটা নিয়ে খবর আসার পরেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত কে তদন্ত করতে বলা হয়েছে । রিপোর্ট হাতে আসার পর তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে ।’।