এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া( পূর্ব বর্ধমান),০৯ জানুয়ারী : ‘এখানকার কালচার কাটমানি কালচার ।চাল চুরি,ত্রিপল চুরি,সিন্ডিকেট,কয়লার ভ্রষ্টাচার,বালি চুরি, কি রকম সরকার তৈরি করেছেন ? আমরা কোভিডের সময় রেশন দিলাম আর সেটাও চুরি করে নিল । পরে টিএমসির নেতার ঘরে খাদ্যশষ্যের গুদাম পাওয়া গেল । এই অবস্থা করেছে টিএমসি । টিএমসি মানে চাল চোর । টিএমসি মানে ত্রিপল চোর ।’ শনিবার কাটোয়ার মুস্থুলি গ্রামে জনসভায় যোগ দিয়ে আমফানের ত্রাণ নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে এরকম বেনজির আক্রমন করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘মাননীয় উচ্চ আদালত পর্যন্ত বলেছিল সিএজিকে দিয়ে অডিট করিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য । কিন্তু মমতা দিদি চাল চোর,ত্রিপল চোরকে বাঁচানোর জন্য সুপ্রীম কোর্ট পর্যন্ত চলে গেলেন ।’
সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির নাম পরিবর্তন নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে একহাত নেন জেপি নাড্ডা । তিনি বলেন, ‘চাল,ত্রিপল চুরি তো হচ্ছেই তার উপর মোদিজীর প্রকল্পগুলোর নামও চুরি করছেন । স্বচ্ছ ভারতকে নির্মল বাংলা । প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে বাংলার বাড়ি । প্রধানমন্ত্রী গ্রামীন সড়ক যোজনাকে বাংলা গ্রামীন সড়ক যোজনা । টাকা মোদিজী দেবেন কিন্তু ছাপ মমতাদিদি লাগাবেন । কিন্তু ছাপ বদলালেও বাংলার মানুষের হৃদয়ে মোদিজীর জায়গা কম হবে না । বাড়বে । মোদিজী সকলের হৃদয়ে আছেন । কি করে সরাবেন মোদিজীকে ?’ এরপর মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে নাড্ডা বলেন, ‘কোভিডের সময় মোদিজী ট্রেন দিয়েছিলেন যাতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরতে পারেন । তখন কে বলেছিল এরা সব করোনার বাহক ? বাংলার মানুষের প্রতি এটাই আপনার ভালোবাসা আর সমর্পন ?’
তিনি বলেন, ‘মমতাদিদি বলতেন আমি মা-মাটি-মানুষের জন্য কাজ করি । কিন্তু বাস্তবে ওনার সরকার তোলাবাজি,তোষন আর সন্ত্রাসের জন্য কাজ করছে । এখন অন্তিম সৎকারের জন্যও কাটমানি দিতে হচ্ছে । চিটফান্ড নারদা-সারদার মত অনেক ভ্রষ্টাচারের উদাহরন এখানে আছে।’
এদিন নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কটাক্ষ করেন জেপি নাড্ডা । তিনি বলেন,’আপনারা জানেন এখানে এক নতুন রাজকুমার কিভাবে রোজগার করেছেন । কিন্তু এসব বেশিদিন চলবে না । সব সত্য একদিন সামনে আসবে । বাংলার মানুষ সব জবাব দেবে ।’
এদিন অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে জগদানন্দপুর গ্রামে আসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা । সেখানে পাঁচ শতাধিক বর্ষ প্রাচীন রাধামাধব মন্দিরে পুজো দেন । পুজো সেরে তিনি প্রায় দেড় কিমি দুরে মুস্থুলি গ্রামে কৃষক সুরক্ষা অভিযানের গ্রামসভার সভামঞ্চে চলে আসেন । তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়, সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা,সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়,সাংসদ স্বপন দাসগুপ্ত, সাংসদ সুনীল মন্ডল, সাংগঠনিক কাটোয়া জেলার সভাপতি কৃষ্ণ ঘোষ । এদিন “কৃষক সুরক্ষা অভিযানের” ভিডিওর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেপি নাড্ডা । পাশাপাশি স্থানীয় কিছু কৃষকরা তাঁকে শষ্য ও বিভিন্ন শাকশব্জি তুলে দেন । জেপি নাড্ডা তাঁদের হাতে একটি করে গেরুয়া ব্যাগ তুলে দিয়ে সম্মানিত করেন ।
এদিন জেপি নাড্ডা বলেন, ‘মোদিজী প্রধানমন্ত্রী হবার পর কৃষাণ ও কৃষির জন্য ৬ গুন বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছেন । ২০১৩–১৪ সালে ইউপিএর জমানায় বাজেট ছিল ২২ হাজার কোটি । সেটা ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি করেছেন মোদিজী । মোদিজীই স্বামীনাথন কমিশন লাগু করেছেন । এছাড়া মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস(এমএসপি) প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন ।’
এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কার্যত তুলোধোনা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা । তিনি বলেন, ‘আজ শুনলাম মমতা দিদি প্রধানমন্ত্রীজীকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন কৃষাণ সম্মান নিধির সঙ্গে উনি জুড়তে চান । কিন্তু মমতাদিদি এখন তো আমরা কৃষক সুরক্ষা অভিযান শুরু করেছি । আপনার চিঠির প্রয়োজন নেই । বিজেপির সরকার হওয়ার পর আমরা এখানে কৃষাণ সম্মান নিধি লাগু করব ।’ সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘দেড় থেকে দু বছর ধরে আমরা বলে আসছি প্রায় ৭০ লাখ পরিবার এই প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হয়ে আছেন । রাজ্যের ২৩ লাখ কৃষক প্রধানমন্ত্রীজীকে চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা অন্তর্ভুক্ত হতে চান । কিন্তু মমতাদির সরকার অনুমতি দেননি । পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে দেখে কৃষকদের জন্য চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন মমতাদিদি ।’ পাশাপাশি আয়ূষ্মান ভারত প্রকল্প লাগু না করায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে জেপি নড্ডা ।
তিনি বলেন, ‘মোদিজী রাজ্যে ৮ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো করেছেন ৩৬৬২ কিমি হাইওয়ে করেছে ৷ মমতাদিদি কিছুই করবেন না । এটা আমাদের বোঝা উচিত । তাই দিল্লিতে মোদিজী আর এখানে যাতে বিজেপির সরকার হয় তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে ।’
এরপর মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে নাড্ডা বলেন, ‘মমতাদিদি সব কথাতেই বলেন, হবে না-হবে না । মে মাসে হবে-হবে-হবে । রাজ্যে বিজেপির সরকার আসবে-আসবে-আসবে ।’
এদিনের সভায় জেপি নাড্ডা জানান, ” আজ থেকে আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দলের কর্মকর্তারা রাজ্যজুড়ে প্রতিটি বুথে ঘুরে ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে শষ্য সংগ্রহ করবেন।আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেই শষ্য এককাট্টা করে কৃষকদের নিয়ে ভোজ করা হবে।কৃষকদের যাবতীয় সুবিধা অসুবিধা নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে।কৃষকদের বোঝানো হবে তাদের সঙ্গে কিভাবে অন্যায় করে যাচ্ছে এরাজ্যের শাসকদল।”
সভা শেষে মুস্থুলি গ্রামে গিয়ে নিতাই মণ্ডল, পাঁচকড়ি মণ্ডল, অমর মণ্ডল, উত্তম মণ্ডল এবং মথুরা মণ্ডল নামে পাঁচ কৃষকের বাড়ি ঘুরে ঘুরে শষ্য সংগ্রহ করেন জেপি নাড্ডা । কৃষকদের আশ্বস্ত করে নাড্ডা বলেন, ” নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আপনাদের পাশে সবসময় রয়েছে।থাকবেও।” পাঁচ কৃষকের বাড়ির দেওয়ালে নিজের হাতে ‘কৃষক সুরক্ষা যোজনা’র স্টিকার সাঁটিয়ে দিয়ে ওই পরিবারগুলিকে ‘কৃষক সন্মান নিধি’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেন। পরে মথুরা মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজন সের তিনি রওনা দেন ।।