আজিজুর রহমান,বর্ধমান,২০ জুন : এই রাজ্যে সরকারী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ ওঠা নতুন কোন ঘটনা নয়। তবে এবার দুর্নীতি কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে খোদ পূর্ব বর্ধমানের গলসি ১ ব্লকের বিডিও-র। তাও আবার ছোট খাটো কোন দুর্নীতি নয় ।সরকারি প্রকল্পের কাজ না হওয়া সত্ত্বেও বেআইনী ভাবে বরাত পাইয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে বিডিও-র বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই জেলা প্রশাসনিক মহলেও শোরগোল পড়ে গিয়েছে ।যদিও দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বিডিও দাবি করেছেন সবকিছু নাকি নিয়ম মেনেই হয়েছে ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ,পূর্ব বর্ধমান জেলা মিড-ডে মিল দফতর ২০২১-২২ অর্থ বর্ষে এম-ডি-এস স্কিমে জেলার ২১৯০ টি প্রাইমারি ও উচ্চ প্রাইমারি স্কুলের রান্নাঘরের স্টোর রুম মেরামতির কাজ করানোর সিদ্ধান্ত নেয় । তার জন্য বরাদ্দ করা হয় ২ কোটি ১৯ লক্ষ টাকার ফাণ্ড । তার থেকে গলসি ১ ব্লকের নয়টি অঞ্চলে ১৪৪ টি স্কুলের জন্য ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা বরাদ্দ হয় । প্রত্যেক স্কুলের জন্য ফাণ্ড ধরা হয় ১০ হাজার টাকা ।
এক ঠিকাদার প্রশাসনের দফতরে অভিযোগ দায়ের করে দাবী করেছেন ,সরকারি প্রকল্পে স্কুলের রান্নাঘর ও স্টোররুম মেরামতের জন্য বরাদ্দ ওই টাকা অন লাইন মাধ্যমে টেন্ডার করার কথা । কিন্তু তা না করে অনৈতিক উপায়ে গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতির ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার অভিজিৎ কোনারকে কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কোটেশন টেন্ডার ডেকে গলসি ১ ব্লকের বিডিও দেবলীনা দাস ওই ঠিকাদারকে ইচ্ছামত কাজের বরাত দিয়েদেন ।এমনকি সরকারী প্রকল্পের কাজ না করা সত্ত্বেও গত ২৯ এপ্রিল ঠিকাদার অভিজিৎ কোনারকে
০০০১৪০ নং চেকে ৪,৪৭,৩৪৮ টাকা, এবং ইং ৬ ই মে ০০০১৪৪ নং চেকে ৯,২৪,৫৫ টাকা মিটিয়েও দেওয়া হয়। এই সংক্রান্ত নথি ইতিমধ্যেই জনসম্মুখে এসেছে।
এই বিষয়ে বিডিও দেবলীনা দাস দাবী করেন,
‘ছুটি থাকার কারনে কাজ বন্ধ ছিল। আগামী এক মাসের মধ্যে সমস্ত কাজ হয়ে যাবে। তাহলে কাজ না হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে একজন ঠিকাদার কাজের টাকা পেয়ে গেলেন? এবিষয়ে বিডিওর বক্তব্য, সবটাই নাকি নিয়ম মেনে হয়েছে ।’
এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎতের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন এলাকার মানুষজন। স্থানীয় বাসিন্দা সেখ ফিরোজ হোসেন জানান,গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্তা ও বিডিও মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রান্নাঘর মেরামতের টাকা তছরুপ করেছেন। যা আমরা কোন ভাবেই মেনে নেব না। বিষয়টি নিয়ে আমরা নয়টি অঞ্চলের মানুষের সই সংগ্রহ করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তদন্তের আবেদন জানাচ্ছি। তার দাবী এর আগেও রুপশ্রী প্রকল্প দুর্নীতি হয়েছিল। তবে সেইভাবে কোন তদন্ত হয়নি। এবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলেন তাঁরা হুসিয়ারি দিয়েছেন।
গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পুর্ত ও পরিবহনের কর্মাধক্ষ্য ফজিলা বেগম বলেন, “ইতিমধ্যেই তিনি একটি লিস্ট হাতে পেয়েছেন। তিনি খবর নিয়ে দেখেছেন তার লোয়া রামগোপালপুর অঞ্চল ছাড়াও বেশকিছু অঞ্চলে কোন স্কুলের রান্নাঘরের স্টোর রুমের মেরামতের কাজ আদৌ হয়নি। তারা বিষয়টি সারে জমিনে তদন্ত করে দেখে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে জানাবেন“। গলসি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সেখ রোকেয়া বলেন, “কাজের বিষয়ে তার কাছে স্কুলের শিক্ষকরা জানতে আসায় বিষয়টি তার নজরে আসে’। এরপর তিনি বিডিও দেবলীনা দাসের কাছে ঘটনা বিষয়ে জানতে গেলে বিডিও এড়িয়ে যান। সেখ রোকেয়া আরো জানান,খোঁজ খবর নিয়ে তিনি জানতে পারেছেনব্লকের কোন স্কুলে রান্নাঘরের স্টোর রুমের মেরামতির কাজই করা হয়নি ।’
গলসির পুরসা হাই স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য নাজমুল জামাদার বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকায় দুর্নীতির বিষয়টি মারাত্বক অপরাধ। তাদের স্কুল ছাড়াও আশেপাশে কোন স্কুলে রান্নাঘর মেরামতের কাজ হয়নি। তথচ এত টাকার ঘোটালা। তাই তিনি চান বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক ।।