প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ জুন : পুলিশের চোখেধুলো দিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে ফেরার ছিল মা ও মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনার মূল অভিযুক্ত। অবশেষে তাঁকে জালে পুড়লো পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পুলিশ । ধৃতের নাম আসরাফ মণ্ডল।তাঁর বাড়ি মেমারি থানার গোবিন্দপুরে । মেমারি থানার পুলিশ শনিবার রাতে বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে । রবিবার ধৃতকে পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে । ধৃতকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়ে ২ জুলাই ফের তাকে আদালতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নৃশংস ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০৮ সালে ১০ সেপ্টেম্বর । গোবিন্দপুরের রশিদা বিবি ও তাঁর মেয়ে মহিমা খাতুন ওই দিন রাতে ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত প্রায় ১২টা নাগাদ আচমকা তঁদের ঘর থেকে পোড়া গন্ধ পান পাশের বাড়িতে থাকা রশিদা বিবির মেয়ে জাহিমা বিবি ও মেজ দেওর। তড়িঘড়ি তাঁরা ঘর থেকে বেরিয়ে রশিদার বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে দেখতে পান, রশিদার ঘর থেকে আগুন বের হচ্ছে।আর ঘরের অ্যাসবেসটর্সের ছাউনির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে তিনজন। জাহিমা ও তাঁদের নিজের কাকাকে দেখতে পেয়ে যান জাহিমা ।
এরপরেই ছাউনি থেকে নেমে ওই তিনজন পালিয়ে যায়। জাহিমার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়। রশিদার ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল। দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে জাহিমা, তাঁর কাকা ও আশপাশের লোকজন দেখতে পান, ঘরে দাউ দাউ করে তখনও আগুন জ্বলছিল। সেই আগুনে পুড়ছিলেন মা ও মেয়ে। তাঁদেরও হাত–পা বাঁধা ছিল। আগুন নিভিয়ে তড়িঘড়ি তাঁদের মেমারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মহিমা মারা যান। অবস্থার অবনতি হলে রশিদাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে তিনিও সেখানে মারা যান।
হাসপাতালে যাওয়ার পথে রশিদা তাঁর মেয়ে জাহিমাকে জানান, পূর্ব শত্রুতাবশত তাঁদের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছাদের উপর থেকে ঘরে কেরোসিন ঢালা হয়। তাতেই ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার কথা জানিয়ে জাহিমা মেমারি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ,এলাকার দয়াল ক্ষেত্রপাল, আসরাফ মণ্ডল ও গনা ক্ষেত্রপাল শত্রুতাবশত তাঁর মা ও বোনকে পুড়িয়ে মেরেছে।
অভিযোগ পেয়ে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে মেমারি থানা। ওই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর দয়াল গ্রেপ্তার হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হয় অপর অভিযুক্তগন। কিন্তু মূল অভিযুক্ত আসরাফকে আর ধরতে পারেনি মেমারি থানার পুলিশ । পরবর্তি সময়ে আসরাফের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তদন্ত সম্পূর্ণ করে আসরাফকে পলাতক দেখিয়ে ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়। পুনরায় আসরাফের বিরুদ্ধে ফের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। দয়াল ও গনা পরে আদালতে জামিন পায়। গ্রেপ্তার এড়াতে আগাম জামিনের আবেদন করে আসরাফ। সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। এতদিন কিছুর পর অবশেষে পুলিশআসরাফকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হওয়ায় স্বস্তিতে মৃতদের পরিবার ।।