প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৮ জুন : চিকিৎসা গাফিলতিতে প্রসুতি মৃত্যুর কারণে চিকিৎসককে ওই প্রসুতির পরিবার কে দিতে হবে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ।বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তপন মণ্ডলকে এমনই নির্দেশ দিয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের আসানসোল সার্কিট বেঞ্চের বিচারক কমল দে । ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারকের এমন নির্দেশ চিকিৎসক মহলে তোলপাড় ফেলে দিয়েছে। ।
শুক্রবার বিকালে ইন্টারনেটে আপলোড হওয়া রায়ে দেখা গিয়েছে ,বিচারক রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে পুরো টাকা মিটিয়ে দিতে বলেছেন।এছাড়াও মামলার খরচ বাবদ প্রসুতির পরিবারকে আরো ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।বিচারক এও নির্দেশ দিয়েছেন ,ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের আদেশ যথাযথ ভাবে পালন করা না হলে মামলাকারী আইন অনুযায়ী পদক্ষেপও নিতে পারবেন।
ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের কালনা গেট এলাকায় বাড়ি বিষ্ণু চক্রবর্তীর। প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে তাঁর স্ত্রী রূপা চক্রবর্তী ২০১৭ সালের ৭ জুলাই বেলা ১২টা ৩৬ নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ১ নম্বর ইউনিটের অধীনে তাঁকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার সময় প্রসুতি যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন ।পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে যন্ত্রণায় ছটফট করা রূপার চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করা হয়। চিকিৎসক ও নার্সদের বহুবার অনুরোধ করা হয় । কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থাই নেয় নি। কিছুক্ষণ পর প্রসুতি রুপার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পরিবারের লোকজন সিজার করার জন্য চিকিৎসক ও নার্সদের বলেন। কিন্তু, তাতেও তারা কর্ণপাত করেন না। রূপদেবীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শেষমেশ ১৮ জুলাই ভোর ৩টে নাগাদ বছর ৩০ বয়সী প্রসুতি রুপাদেবী মারা যান। তাঁর মৃত্যু নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গড়ে। মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্টে দীর্ঘ প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে জরায়ু ফেটে গিয়ে প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়।
রুপাদেবীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নি তাঁর স্বামী বিষ্ণু চক্রবর্তী ও তাঁর ৭ বছর বয়সী মেয়ে দিশা। রুপাদেবীর মৃত্যু নিয়ে তাঁরা ক্ষতিপূরণের দাবী করে আসানসোল সার্কিট বেঞ্চে মামলা করেন। তাঁদের আইনজীবী শান্তিরঞ্জন হাজরা আদালতে বলেন, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও রোগীর ঠিকমতো চিকিৎসা করা হয়নি। সময়মতো সিজারও করা হয় নি । সেটা হলে মহিলা এবং বাচ্চা দু’জনকেই বাঁচানো যেত। চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই মহিলার মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোের্ট সুস্পষ্টভাবে দীর্ঘ প্রসব যন্ত্রণায় জরায়ু ফেটে মহিলার মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের গাফিলতি নিয়ে ক্রেতা আদালতে মামলা করা হয়।আদালত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আদালত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ থেকে মুক্ত করে দিয়েছে।
যদিও আদালতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ও চিকিৎসকের আইনজীবী সব ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁরা দাবী করেন ,হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা হয়। সে কারণে বিষয়টি ক্রেতা আদালতের বিচার্য নয় । এক্ষেত্রে রোগীও ক্রেতা নন। এছাড়াও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের আইনজীবী বেশকিছু টেকনিক্যাল প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা আদালতে জানান ,নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন পর মহিলাকে হাসপাতালে ভির্ত করা হয়েছিল ।তবুও চিকিৎসকরা মহিলাকে বাঁচানোর সব ধরণের চেষ্টা করেছিল। তা সত্বেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। মহিলার চিকিৎসায় কোনও রকম গাফিলতি ছিল না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে দাবী করেন । যদিও বিচারক এই সব দাবীকে আমল না দিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন ।।