প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ জুন : বাপের বাড়িতে চলে যাওয়া বউকে সবক শেখাতে নিজের নাবালক ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হল স্বামী।মৃতরা হলেন অতীশ মজুমদার (৩৩) ও অমর মজুমদার (৮)।বুধবার চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের নবগ্রাম কলোনী এলাকায়। খবর পেয়ে এদিন দুপুরে মৃতদের বাড়িতে পৌছায় খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ। বাড়ি থেকে বাবা ও ছেলের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য এদিনই বর্ধমান হাসপাতালে পাঠায়।গোটা ঘটনার জন্য ভাতৃবধূ রুপাদেবী ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে দায়ীকরে এদিন সন্ধ্যায় খণ্ডঘোষ
থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অতীশের দাদা ক্ষিতিশ মজুমদার ।দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত নেমে পুলিশ অতীশের স্ত্রী রুপাদেবীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ,
খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রাম পঞ্চায়েতের নবগ্রাম
কলোনীতে বাড়ি অতীশ মজুমদারের । তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন । প্রায় ১৩-১৪ বছর আগে খণ্ডঘোষের কুমিরখোলা গ্রাম নিবাসী তরুণী রুপার সঙ্গে বিয়ে হয় অতীশের ।দম্পতির কন্যা সন্তান নুপুরের বয়স ১২ বছর । আর পুত্র সন্তান অমরের বয়স মাত্র আট বছর । রাগারাগি করে নিজের দুই সন্তান ও স্বামী অতীশ কে ছেড়ে বধূ রপাদেবী ৬- ৭ মাস আগে কুমিরকোলায় বাপের বাড়ি চলে যায় । বউকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে অতীশ বাবু অনেকবার কুমিরকোলায় যান । কিন্তু তার স্ত্রী কিছুতেই শ্বশুর বাড়ি ফিরে আসতে চান না ।অশান্তির পর ছয় মাস আগে অতীশ উত্তরপ্রদেশে কাজে চলে যায়।তখন অতীশের মা জ্যোৎস্নাদেবী দেখাশুনা করতেন অতীশের দুই নাবালক ছেলে মেয়েকে । দু’মাস আগে অতীশ নিজের বাড়িতে ফিরে ছেলে মেয়েকে নিয়েই থাকছিল । অতীশের মামা ফটিক বিশ্বাস এদিন রুপাকে শ্বশুর বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে কুমিরকোলা যান। কিন্তু তাঁকেও অপমানিত হয়ে ফিরতে হয়। সেই কথা জানতে পেরে এদিন অতীশ নিজের ঘরেই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়ে বসে বলে মনে করছেন পরিবার সদস্যরা।
জ্যোৎস্নাদেবী এদিন বলেন, “তাঁর নাতনি নুপুর এদিন বেলা ১১ টা নাগাদ দামোদরে স্নান করতে গিয়েছিল। ওই সময়ে তাঁর ছেলে অতীশ নাতি অমর কে নিজের ঘরে ডেকে নেয় ।নাতনি স্নান সেরে ঘরে ফিরে তাঁর বাবাকে ডাকাডাকি করে । ঘরের দরজাতেও ধাক্কা দেয় । কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পায় না । অনেক্ষণ সাড়াশব্দ না পেয়ে নাতনি নুপুর মই নিয়ে ঘরের অ্যাসবেস্টর চালার ওঠে । চালার ফাঁক দিয়ে সে দেখতে পায় ঘরের কাঠামোয় গলায় দড়ি ফাঁশ লাগানো অবস্থায় তাঁর বাবার দেহ ঝুলছে।এমনটা দেখেই নাতনি নুপুর কান্নাকাটি শুরু করে । ঘটনার কথা জানতে পেরে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে ।তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে, ঘরে ভিতর অতীশের দেহ ঝুলছে । আর ওই ঘরেরই তক্তার তলায় মেঝেতে গলায় গামছার ফাঁস জড়ানো ও কম্বল মোড়া অবস্থায় পড়ে রয়েছে অতীশের ছেলে অমরের নিথর দেহ ।এই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে গিয়ে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ঘরটি শিল করে দিয়েছে ।
অতীশের মামা ফটিক বিশ্বাস এদিন দাবি করেন, “তাঁর ভাগ্নের বউকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার জন্যে এদিন সকালে কুমিকোলা গিয়েছিলাম । কিন্ত সেখানে বউমা ও তাঁর বাবার বাড়ির লোকজনের কাছে অপমানিত হয়ে ফিরতে হয়েছে।স্ত্রীকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে গিয়ে অতিশও বাববার অপমানিত হয়েছে।ফটিক বাবু বলেন ,অপমান আর সহ্য করতে না পেরেই হয়তো এদিন অতীশ তাঁর ছেলেকে প্রাণে মেরে দিয়ে নিজেও আত্মঘাতী হয়েছে ।’
এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সু্প্রভাত চক্রবর্তী বলেন, ‘নিজের ছেলেকে খুন করে অতীশ আত্মঘাতী হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না অতীশের। স্ত্রী বাপের বাড়িতে থাকছিলেন। পারিবারিক অশান্তির জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গিয়েছে ।’।