এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ জুন : প্রাক্তন বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার কথিত ধর্মনিন্দার প্রতিবাদের নামে এরাজ্যেও ছড়িয়েছে হিংসার আগুন । এই পরিস্থিতিতে শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গকে হিংসার আগুন থেকে বাঁচানোর আর্তি জানিয়েছেন বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর লোকসভার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনাকে অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি। বাংলার অতীত ইতিহাস ভুলে যাওয়া যায় না এবং উপেক্ষা করা যায় না। এক সময়ে একটা প্রবাদটি বেশ বিখ্যাত ছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গ যা আজ ভাবে,তা কাল ভাবে দেশ’ । কিন্তু আমি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাই যে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমি শুধু চলতি সপ্তাহের ঘটনাক্রম সম্পর্কে অবগত করাতে চাই । ১০ জুন তারিখে প্রতিবাদের নামে হাওড়ায় জাতীয় সড়ক ৮ প্রায় ১২ ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিল যার কারণে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
তিনি লিখেছেন, ‘গত ১০ জুন পার্ক সার্কাসে একটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল । অন্যদিকে তখন রোহিঙ্গা এবং তৃণমূলের গুন্ডারা ডোমজুর থানার পুলিশকে নির্মমভাবে মারধর করেছিল । মা,মাটি মানুষের কথা বলে ক্ষমতায় আসা তৃণমূল সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা ভবানীপুরে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে । পশ্চিমবঙ্গের মানুষ তটস্থ হয়ে আছে, মানুষ আতঙ্কিত, রাজ্যের মানুষ ভয়ে আছে । রাজ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ক্রমাগত বাড়ছে এবং তাদের দ্বারা অপরাধ দিন দিন বেড়ে চলেছে ।’
তিনি লেখেন, ‘রাজ্য সরকার রোহিঙ্গাদের কাজে লাগিয়ে রাজ্যের জনগণের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে । আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ ও প্রার্থনা করব আপনি দয়া করে পশ্চিমবঙ্গকে হিংসার আগুন থেকে বাঁচান । আমাদের বাংলা নিরাপদ নয়। আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ আমাদের বাংলার জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে শীঘ্রই কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করুন । আমি আশা করি এই নিষ্পেষণকারী ও অত্যাচারী সরকারের হাত থেকে আপনি শীঘ্রই আমাদের সকলকে রক্ষা করবেন ।’
প্রসঙ্গত,শুক্রবারের নামাজের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে একাধিক জায়গায় কথিত ধর্মনিন্দার প্রতিবাদের নামে পথ অবরোধ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে । শনিবার হাওড়া-খড়গপুর শাখায় রেল অবরোধের জেরে হায়দ্রাবাদ থেকে চিকিৎসা করিয়ে আসা এক রোগীর মৃত্যু হয় । জানা গেছে, তিনি হায়দ্রাবাদ হাওড়া ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন । কিন্তু ট্রেনটি খড়গপুরে ঢোকার পর দেউলটি স্টেশনে অবরোধ শুরু হয় । ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রেনে আটকে থাকায় তিনি অসুস্থ হয়ে অচৈতন্য হয়ে যান । এরর রেলের চিকিত্সকরা তাঁকে প্রাণে বাঁচানোর চেষ্টা করেন । কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর ।
এছাড়া ধূলাগড়,উলুবেড়িয়া,ডোমজুড় প্রভৃতি এলাকায় ব্যাপক অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর । রেল অবরোধের জেরে লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি দূরপাল্লার ট্রেন চলাচলে প্রভাব পড়েছে । ফলে চুড়ান্ত নাকাল হতে হচ্ছে রেলযাত্রীদের । বেশ কিছু ট্রেনের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে,এমনকি বাতিলও করে দেওয়া হয়েছে ট্রেন । হিংসার জেরে ১৩ জুন ভোর ছয়টা পর্যন্ত হাওড়া জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন ।।