প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ জুন : সাপসহ খিচুড়ি রান্নাকরে শিশু ও গর্ভবতীদের খেতে দেওয়ার চরম মাশুল গুনতে হল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে দুই কর্মীকে।পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে বৃহষ্পতিবার তালা ঝলিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি এদিন শিশু ও গর্ভবতীরা ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না হওয়া খাবার খাওয়া বয়কট করেন । এমনকি তাঁরা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দুই কর্মীকেই অন্যত্র সরিয়ে দেবার দাবিতে আন্দোলনে নেমে পড়েন। ক্ষোভ বিক্ষোভ সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত প্রশাসন বাগকালাপাহাড় গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা দুই কর্মীকেই অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ।প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আপাতত এলাকাবাসীর ক্ষোভ বিক্ষোভে বিরাম পড়েছে ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , জামালপুর ব্লকের পাড়াতল ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগকালাপাহাড়। শিশু ও গর্ভবতী মিলিয়ে ওই গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিদায়ক খাবার পাওয়ার জন্য ৫৪ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে । তাঁরা মূলত খোরদোপলাশি কাঠালডাঙা ও বাগকালাপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা।অন্যান দিনের মতো বুধবার সকালেও ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়। রান্না শেষে শিশু ও গর্ভবতীদের দেওয়া হয় ওই খিচুড়ি। ঘরে বসে খিচুড়ি খেতে গিয়ে এক শিশু দেখে খিচুড়ির মধ্যে পড়ে রয়েছে মরা সাপের বাচ্চা । এমনটা দেখেই ওই শিশু ও তাঁর পরিবারের লোকজন অাঁতকে ওঠেন ।তাঁরাই ছুটে গিয়ে গ্রামের অন্য শিশুর পরিবার ও গর্ভবতীদের বিষয়টি জানান ।খিচুড়ি না খাওয়ার জন্যে তাঁদের বলেন। ততক্ষণে ছয়জন শিশু খুচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল।সাপ সহ খিচুড়ি রান্না হয়েছে জেনে তারা ভয়ে আতঙ্কে অসুস্থতা অনুভব করা শুরু করে ।ওইদিনই দুপুরে চিকিৎসার জন্য শিশুদের নিয়ে জামালপুর হাসপাতালে পৌছে যান তাঁদের মায়েরা । ঘটনার কথা জানার পরেই নড়ে চড়ে বসেন ব্লক ও জেলা প্রশাসনের কর্তারা ।এমন গাফিলতির জন্য বুধবারই শো-কজ করা হয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মী জ্যোৎস্না ঘোষ ও তাঁর হেলপার শিখা মালিককে।এরপর এদিন কেন্দ্রের দুই কর্মীকে নিয়ে গ্রামবাসীদের ক্ষোভ বিক্ষোভ চরমে উঠলে প্রশাসন দুই কর্মীকেই অন্যত্র বদলি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় ।
এদিনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিশুর মা রেখা মুদি বলেন,এদিনও আমাদের গ্রামের
অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এসে দুই কর্মী খিচুড়ি রান্না করে । কিন্তু ভয়ে আতঙ্কে কেউ খিচুড়ি খায়নি। এতদিন যাঁরা যাঁরা কেন্দ্র থেকে খিচুড়ি নিতেন তাঁরা সবাই এদিন খিচুড়ি নেওয়া বয়কট করেন ।অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা ,স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে খিচুড়ি রান্না করা ও গাফিলতিতে যুক্ত কেন্দ্রের দুই কর্মীকেই অন্যত্র সরিয়ে দেবার দাবিতে গ্রামের সবাই সরব হন। এই দাবি পুরণের লক্ষে এদিন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দরজায় তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে ।প্রশাসন এই দাবি না মানা পর্যন্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আর খুলতে দেওয়া হবে না বলে গ্রাম বাসীরা একযোগে এদিন জানিয়ে দেন । অপর গ্রামবাসী মধুমিতা মুদি ও মিলন মুদি বলেন ,
‘বুধবার ’চিতি সাপ’ সহ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খাচুড়ি রান্না হয় । এর আগে আরশোলা,ইঁদুরের মল ,পোকা মাকড় আমাদের গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্না হওয়া খিচুড়িতে পাওয়া গিয়েছে। সেইসব নিয়ে কেন্দ্রের দুই কর্মীকে বলা হলে তাঁরা কোন গুরুত্ব দিতেন না । উল্টে তারা সরকার থেকে পাঠানো চালের মান খারাপ বলে দোহাই দিতেন । মধুমিতা মুদি দাবি করেনতাঁদের বাগকালাপাহাড় গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যে খিচুড়ি রান্না হয় তা মানুষের খাওয়ায় অযোগ্য। ওই খিচুড়ি পুষ্টি দায়ক তো নয়ই ,বরং খাওয়া বিপদ বলে তাঁরা মনে করেন ।
জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার এদিন বলেন,’অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সাপ সহ রান্না হওয়া খিচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল ছয় শিশু।
এখনও পর্যন্থ তাদের বড় কোন বিপদ হয় নি এটাই রক্ষে।এই গাফিলতির ঘটনা বুধবারই জেলা প্রশাসনের নজরে আনা হয় । কেন্দ্রের দুই কর্মীকে ঘটনার দিনেই শোকজ করা হয়েছে ।এতবড় একটা ঘটনার জন্য যাঁরা দায়ী তাঁদের কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না ।গ্রামবাসীদের দাবির বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বিডিও জানিয়েছেন“। ডিপিও (আইসিডিএস) পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন,”গাফিলতির জন্যে ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা দু’জনকেই অন্যত্র বদলি করা হয়েছে ।’।